বিড়ালকে কি কি খাওয়ানো যায়?

বিড়ালকে কি কি খাওয়ানো যায়? যখন আপনি সোফায় বসে মজাদার কোনো নাস্তা করবেন এবং কয়েক মুহূর্ত পরেই আপনার বাড়িতে থাকা বিড়ালটি আপনার পায়ের চারপাশে কুণ্ডলী করে মেঝেতে বসে একটি করুণ দৃষ্টিতে আপনার নাস্তার দিকে চেয়ে থাকবে, তখন হয়তো বিড়ালটিকে দেখে আপনার খুব কিউট ও অসহায়ও মনে হতে পারে।

যদিও বিড়ালটির সাথে নাস্তা করতে আপনি অনেক বেশি খুশি হবেন, কিন্তু তাকে আপনার করা খাবারটি তুলে দেয়ার আগে অবশ্যই দেখে নিবেন কোন খাবারটি আপনি আপনার বিড়ালকে দিচ্ছেন। কেননা যে খাবারটি আপনি আপনার বিড়ালকে দিবেন সেটি তার স্বাস্থ্যের জন্য ভালো নাও হতে পারে।

যেহুতু আগের অনেক আর্টিকেলে আমরা জেনেছি যে মানুষের খাদ্যতালিকার অনেক খাবার বিড়ালদের জন্য সম্পূর্ণ নিরাপদ নয়, তাই আশা করি কেন মানুষের সব খাবার বিড়ালদের খাওয়াবেন না এটা আর বিশেষ করে বলতে হবে না। তবে মানুষের খাদ্যতালিকার কিছু খাবার বিড়ালদের জন্য ভালো, যেগুলো আপনি প্রতিনিয়তই আপনার বিড়ালকে খেতে দিতে পারেন। তাহলে দেরি না করে চলুন জেনে নেয়া যাক কোন মানুষদের খাবারগুলো বিড়ালকে খাওয়ানো যায়:

১. মাছ

বিড়ালদের প্রিয় খাবারের খাদ্যতালিকায় যে খাদ্যটি সব সময় উপরে থাকে সেটি হলো মাছ। মানুষের মতোই মাছ বিড়ালের নিকট অত্যন্ত সুস্বাদু একটি খাবার। যেহুতু বিড়ালকে সব মাছই খেতে দেয়া যায়, তবে আপনি তাকে বিশেষ করে টনা বা সামুদ্রিক তৈলাক্ত মাছগুলো খেতে দিতে পারেন। এই মাছগুলো তার দৃষ্টিশক্তি, হাড় ও মস্তিষ্কের বিকাশে সাহায্য করে থাকে। তাই বিড়ালের খাদ্যতালিকায় মাছ সর্বদা রাখতে পারেন।

২. মাংস

বিড়ালদের প্রিয় খাবারের খাদ্যতালিকায় আরেকটি খাবার হলো মাংস। মুরগির মাংস, গরুর মাংস কিংবা অন্যান্য যেকোনো পশুর মাংস আপনার বিড়ালের একটি পছন্দের প্রাকৃতিক খাবার। তবে রান্না করা মুরগির মাংস আপনার বিড়ালের জন্য বলতে গেলে সেরা। কিন্তু যে মাংসই আপনি আপনার বিড়ালকে খেতে দিন না কেন সেটি যেন রান্না করা হয় এবং এতে যেন বেশি পরিমাণে লবণ ও মশলা দেয়া না হয়। অতিরিক্ত লবণ ও মশলাযুক্ত মাংস বিড়ালের জন্য বিষাক্ত হতে পারে। এর ফলে বিড়ালের ডায়রিয়া সৃষ্টি হয়। তাই বিড়ালের মাংসে লবণ ও মশলা যথাসম্ভব এড়িয়ে চলতে হবে।

(পড়ুনঃ বিড়াল যদি খাবার না খেতে চায়, তাহলে আপনি কি করবেন? )

৩. পনির

আপনার বিড়ালের খাদ্যতালিকায় নিয়মিত এক টুকরো পনির আপনার বিড়ালের জন্য খুবই উপকারী। কেননা পনিরে আছে প্রচুর পরিমাণে ক্যালসিয়াম ও প্রোটিন। তবে অতিরিক্ত পনির বিড়ালের পাকস্থলীর হজম প্রক্রিয়ায় বিগ্ন ঘটাতে পারে। তাই বিড়ালকে নিয়মিত পনির খাওয়ানো গেলেও বেশি পরিমাণে পনির খেতে দেয়া যাবে না।

৪. কলা

মানুষই একমাত্র নয় যারা কলা খেয়ে উপকৃত হতে পারে। কলা বিড়ালদের জন্যও একটি স্বাস্থ্যকর খাবার। কেননা কলায় আছে উচ্চ পরিমাণে পটাশিয়াম যা বিড়ালদের জন্য একান্ত আবশ্যক একটি পুষ্টি উপাদান। তবে এদের খুব বেশি পরিমাণে খেতে না দিয়ে শুধুমাত্র মাঝে মাঝে একটু করে খেতে দেয়া উচিত।

(পড়ুনঃ আপনার যদি বিড়ালের একটি ছোট বাচ্চা থাকে আর সে কিছু না খেতে চায়, তাহলে এই পোস্ট পড়ুন)

৫. বেরি

আমাদের সবার পছন্দের বেরি ফল বিড়ালদের জন্যেও একটি পছন্দের ফল। ব্লুবেরি এবং স্ট্রবেরিতে চিনির পরিমাণ খুব কম থাকলেও এতে থাকা অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট বিড়ালদের রোগ প্রতিরোধে অত্যন্ত কার্যকরী একটি পুষ্টি উপাদান। যদিও বেরি ফলের দাম একটু বেশি, আপনি চেষ্টা করলে মাঝে মাঝেই আপনার বিড়ালকে বেরি খাওয়াতে পারেন।

৬. তরমুজ

অনেক বিড়ালই বীজহীন তরমুজের ছোট টুকরা খেতে খুব পছন্দ করে। তাই আপনি চাইলে মাঝে মাঝেই আপনার বিড়ালকে তরমুজ খাওয়াতে পারেন। তবে বেশি খাওয়ালে বিড়ালের পতলা পায়খানাসহ ডায়রিয়া হতে পারে। তরমুজে রয়েছে প্রচুর পরিমাণে ভিটামিন এ এবং সি যা মানুষের মতো আপনার বিড়ালের জন্যও প্রয়োজনীয় উপাদান।

৭. গাজর

যদিও মানুষের মতো বিড়ালদের শাকসবজির খাওয়ানোর কোনো প্রয়োজন তেমন একটা হয় না, তবে গাজর এদের জন্য একটি নিরাপদ ও স্বাস্থ্যকর খাবার হতে পারে। গাজরে থাকা আয়রণ ও অন্যান্য পুষ্টি উপকরণ বিড়ালদের জন্য অত্যন্ত উপকারী। তাই মাঝে মাঝেই আপনার বিড়ালকে কিছু রান্না করা গাজর খাওয়াতে পারেন। তবে আপনার বিড়ালের থেকে কাঁচা গাজর এড়িয়ে চলুন। কেননা কাঁচা গাজর বিড়ালের কন্ঠনালিতে আটকে শ্বাসরোধের ঝুঁকি তৈরি করতে পারে।

৮. ভাত

যদিও বিড়ালদের খাদ্যতালিকায ভাত তেমন খুব প্রয়োজনীয় কোনো খাবার নয, তবে সামান্য সাদা ভাত আপনার বিড়ালকে খেতে দিতে সেটি তার ক্ষতি করবে না। কেননা ভাতে থাকা শ্বেতসার উপরন্তু তাকে প্রাণবন্ত করতে সহায়তা করবে। এছাড়া যদি আপনার বিড়ালের হজম ক্রিয়ায় কোনো সমস্যা থাকে তাহলে এটি তার সহায়ক হতে পারে। কিন্তু আপনার বিড়াল ভাত খেতে খুব পছন্দ করলেও কখনোই বেশি পরিমাণে ভাত একে খেতে দিবেন না।

৯. কুমড়া

কুমড়া যদিও শাক সবজির তালিকায় পড়ে, তবে এটি মানুষের মতোই বিড়ালদের একটি পুষ্টিকর খাবার। তাই মাঝে মাঝেই আপনার বিড়ালকে আপনি রান্না করা কুমড়া খেতে দিতে পারেন। তবে রান্না করার সময় আপনার বিড়ালদের জন্য আপনি যেটি তৈরি করবেন সেটিতে কোনো মশলা দিবেন না। মিষ্টি কুমড়াতে রয়েছে ফাইবার ও অন্যান্য পুষ্টি উপাদান যা আপনার বিড়ালের কোষ্ঠকাঠিন্য থেকে শুরু করে বিড়ালের লোম পর্যন্ত সব কিছুতেই সাহায্য করতে পারে।

১০. জইচূর্ণ

জইচূর্ণ যেমন- চালের গুঁড়া, গমের গুঁড়া, ভুট্টার গুঁড়া এগুলোতে রয়েছে প্রচুর পরিমাণে ফাইবার, আয়রন ও প্রোটিন। আর এগুলোর সবই আপনার বিড়ালের সার্বিক স্বাস্থ্যের জন্য অত্যন্ত উপকারী যা বলে শেষ করানো যাবে না। তাই মাঝে মাঝেই আপনার বিড়ালকে চালের গুঁড়া, গমের গুঁড়া অথবা ভুট্টার গুঁড়া খাওয়াতে পারেন। তবে বেশি পরিমাণে খেতে দিলে বিড়ালের হজমে সমস্যা হতে পারে। তাই যতটা পারবেন কম খাওয়ানোর চেষ্টা করবেন।

১১. ডিম

প্রোটিন সমৃদ্ধ ডিম হলো বিড়ালদের আরেকটি স্বাস্থ্যকর খাবার যা আপনি আপনার বিড়ালের সাথে ভাগ করে খেতে পারেন। ডিমের সাদা অংশে থাকা গ্লোবিউলিন এবং কুসুমে থাকা অ্যালবুমিন বিড়ালের শারীরিক বৃদ্ধিতে অত্যন্ত সহায়তা করে থাকে। তাই মাঝে মাঝেই আপনার বিড়ালকে আপনি রান্না করা সিদ্ধ ডিম খেতে দিতে পারেন। তবে কখনোই আপনার বিড়ালকে কাঁচা বিড়াল খেতে দিবেন না। কারণ কাঁচা ডিমে থাকা সালমোনেলা বা ই. কোলাই নামক ব্যাকটেরিয়া থাকে যা বিড়ালের পাকস্থলীতে সমস্যার তৈরি করতে পারে।

১২. পালং শাক

আপনি যদি কখনও আপনার বিড়ালকে ঘাস খেতে দেখেন, তাহলে বুঝবেন যে আপনার বিড়াল ঘাস বা শাক সবজির প্রতি অনেকটা আগ্রহী। এমতাবস্থায় আপনি আপনার বিড়ালকে বিভিন্ন শাক সবজির মধ্যে পালং শাক খেতে দিতে পারেন। কেননা পালং শাকে রয়েছে প্রচুর পরিমাণে ভিটামিন এ ও আয়রণ। ভিটামিন এ বিড়ালের দৃষ্টিশক্তি বাড়াতে অনেক সহায়তা করে থাকে। তাই মাঝে মাঝে আপনি আপনার বিড়ালকে পালং শাক খাওয়ানোর চেষ্টা করবেন। তবে আপনার বিড়ালের যদি কিডনি বা প্রস্রাবের ক্রিয়ায় কোনো সমস্যা থাকে, তাহলে আপনার বিড়ালকে পালং শাক খেতে দেওয়া উচিত নয়।

পরিশেষে যদি বলি, অবশ্যই উপরিউক্ত খাদ্যতালিকাটি বিড়ালদের উপর বিভিন্ন গভেষণা করেই তারপর বলা হয়েছে। সুষম ও পুষ্টিকর খাদ্য হিসেবে এই খাবারগুলি যেকোন সময় আপনি দোকান থেকে কিনে তারপর আপনার বিড়ালকে খাওয়াতে পারেন। তবে সব খাবারগুলো কখনো একসাথে খেতে না দিয়ে মাঝে মাঝে খেতে দেয়া উচিত। এবং সব কিছু জানার পরেও আপনার বিড়ালটিকে কোনটি খাওয়ানো উচিত হবে এবং কোনটি খাওয়ানো উচিত হবে না এটা নিয়ে আপনার মনে যদি কোনো প্রকার কোনো উদ্বেগ থাকে, তাহলে আপনার বিড়ালকে প্রতিদিন খাওয়ানোর জন্য সেরা খাদ্যতালিকা সম্পর্কে আপনার পশুচিকিৎসকের সাথে কথা বলে দেখতে পারেন।

Leave a Comment