বিড়ালের ছোট বাচ্চা কি খায়? আপনার বিড়ালছানার শারীরিক বৃদ্ধি ও মানসিক উন্নতির জন্য সঠিক খাবার নির্বাচন করা খুবই প্রয়োজনীয়। সাধারণত বিড়ালছানার খাদ্যতালিকা পূর্ণবয়স্ক বিড়ালের খাদ্যতালিকা থেকে সম্পূর্ণ ভিন্ন হওয়া উচিত কারণ এদের শরীরে বয়সভেদে পুষ্টির চাহিদা আলাদা হয়। এজন্য বিড়ালছানাদের জন্য সঠিক পুষ্টি সমৃদ্ধ ও এদের সুস্বাস্থ্যের উপযোগী একটি খাদ্যতালিকা তৈরি করতে হবে যা প্রদানের মাধ্যমে আপনি এদের শারীরিক বিকাশে সহায়তা করতে পারবেন।
বিড়ালের ছোট বাচ্চা কি খায়? বিড়ালছানাকে কী খাওয়ানো প্রয়োজন?
একবার যখন বিড়ালছানারা মায়ের দুধপান ছেড়ে দেয়, তখন এরা বিভিন্ন রকম খাবার খাওয়া শুরু করে। যদি আপনি বিড়ালছানাকে কী খাওয়াতে হবে এটা নিয়ে চিন্তিত থাকেন, তাহলে আপনার উচিত হবে বাজার থেকে বিশেষভাবে বিড়ালছানাদের জন্য তৈরি বিভিন্ন প্যাকেটজাত দ্রব্য নিয়ে আসা যেগুলোতে বিড়ালছানার প্রয়োজনীয় সকল পুষ্টি উপাদান রয়েছে।
তবে বিড়ালছানাদের খাদ্যতালিকা সুষম হওয়া উচিত যেটায় সকল পুষ্টি উপাদান ভরপুর থাকবে। কেননা বিড়ালছানার শারীরিক বৃদ্ধি, উন্নতি ও এনার্জির মাত্রা বিকাশলাভে প্রোটিন; স্বাস্থ্যকর ও শক্তিশালী দাঁত ও হাড়ের বিকাশলাভে ক্যালসিয়াম; মস্তিষ্কের উন্নতি ও দৃষ্ঠাশক্তির বিকাশলাভে DHA প্রয়োজন।
কোন সময় তালিকা অনুযায়ী বিড়ালছানাকে খাওয়াবেন?
বিড়ালের ছোট বাচ্চা কি খায়? যদি আপনার একটি বিড়ালছানা থেকে থাকে কিংবা আপনি যদি একটি বিড়ালছানাকে আপনার পরিবারে নিয়ে আসতে চান, তাহলে নিচে বিড়ালছানাকে কখন কী খাওয়াতে হবে সেটার একটা বিবরণ দেয়া হলো যা আপনাকে পরবর্তীতে সহায়তা করবে।
১. প্রথম ৪ সপ্তাহ:
মা বিড়ালরা সাধারণত তাদের বিড়ালছানাকে প্রথম ৪ সপ্তাহ থেকে ৬ সপ্তাহ বুকের দুধ খাওয়ায়। তবে আপনার যদি একটি কমবয়সী বিড়ালছানা থেকে থাকে যেটিকে তার মা শারীরিক অসুস্থতা কিংবা অবহেলার কারণে বুকের দুধ খাওয়ায় না, সেক্ষেত্রে আপনি আপনার বিড়ালছানাকে মায়ের দুধের বিকল্প হিসেবে বিড়ালছানার উপযোগী প্যাকেটকৃত দুধ খাওয়াতে পারেন। কম বয়সী বিড়ালছানাদের খুব ঘনঘন দুধ খাওয়ানো প্রয়োজন। এরা সাধারণত প্রতি ২ থেকে ৪ ঘন্টা পরপর দুধ খায় ৪ সপ্তাহ বয়সের হওয়া পর্যন্ত।
( আরো পড়ুন যদি আপনার বিড়ালের ডায়রিয়া আপনাকে ভাবিয়ে তুলে)
২. ৪-৫ সপ্তাহ:
এই সময়টাতে বেশিরভাগ বিড়ালছানাই শক্ত খাবারে অভ্যস্ত হতে শুরু করে। তাই এই সময়ে এদের দুধের সাথে শক্ত খাবার সমন্বয় করা দরকার। কিছু বিড়ালছানা রয়েছে যারা অন্যদের তুলনায় শক্ত খাবার গ্রহণ করতে অনেক বেশি আগ্রহী হয়। কিন্তু যদি আপনার বিড়ালছানা শক্ত খাবার গ্রহণ করতে অনিচ্ছা প্রকাশ করে, তবে এদের ওজন বাড়াতে ও সুস্বাস্থ্য বজায় রাখতে দুধ খাদ্যতালিকার শীর্ষে রাখুন। একটা সময় পার হলে এরা নিজেরাই শক্ত খাবারে অভ্যস্ত হতে শুরু করবে।
৩. ৬-৮ সপ্তাহ:
এই সময়টাতে আপনার বিড়ালছানার পুরোপুরিভাবে দুধ ছাড়ানো উচিত এবং এদের শক্ত খাবারের সাথে পুরোপুরিভাবে অভ্যস্ত হওয়া উচিত। নরম ও শুকনো খাবার এদের খাদ্যতালিকায় রাখুন যে খাবারগুলো বিশেষভাবে বিড়ালছানাদের জন্য তৈরি করা হয়। তবে অঅপনার বিড়ালছানার খাবারের পাশাপাশি যেন সবসময় তার পাশে এক বাটি বিশুদ্ধ পানি থাকে সেদিকে আপনার খেয়াল রাখতে হবে। বেশিরভাগ বিড়ালছানাই এই বয়সে দিনে ৩-৪ বার পানি পান করে থাকে।
( আরো পড়ুন বিশেষ করে আপনার বিড়াল যদি রাতের বেলায় ঘুমাতে না চায় )
৪. 8 সপ্তাহ এবং তার পরে:
আপনার বিড়ালছানাকে দিনে অন্তত ৪ বার খাওয়াতে থাকুন এবং বিড়ালছানার ৬ মাস বয়স না হওয়া পর্যন্ত ভালো মানের খাবার এর খাদ্যতালিকায় রাখুন। যখন এরা ৬ মাস বয়সী হয়ে যাবে তখন আপনি প্রতিদিন এদের দুই বেলা খাওয়া কমাতে পারেন।
বিড়ালছানার প্রথম বছর বয়সে যে ৮টি খাবার তার খাদ্যতালিকায় রাখবেন
১. বিড়ালছানার প্রাথমিক খাবার
আপনার বিড়ালছানার প্রথম কয়েক সপ্তাহ নয়, যখন আপনার বিড়ালছানা বড় হবে তখনো তার খাদ্যতালিকায় সবসময় ভালো মানের খাবার রাখা উচিত। তবে যে খাবারগুলোই আপনি তাকে খাওয়ান না কেন এটা সব সময় মনে রাখবেন যে খাবারগুলো আপনি তাকে দিচ্ছেন সেগুলো যেন বিড়ালছানার স্বাস্থ্য উপযোগী হয়। নাতো তার পাকস্থলীর হজমে বিপর্যয় ঘটতে পারে।
এছাড়া তার খাদ্যতালিকায় যে খাবারগুলো রাখবেন চেষ্টা করবেন সেগুলো যেন ভালো ব্র্যান্ডের মানে ভালো কোম্পানির দ্বারা প্রস্তুত করা হয় এবং খাদ্যতালিকায় রাখা খাবারগুলো যেন পরিবর্তন করা না হয়। এতে নতুন খাবারের স্বাদের সাথে বিড়ালছানার অভ্যস্ত হতে সমস্যা হতে পারে।
(আরো পড়ুন যদি আপনার বিড়াল লিটার বক্স ব্যবহার বন্ধ করে দেয়)
২. বিড়ালের কৌটাজাত খাবার
আপনার বিড়ালছানার খাদ্যতালিকায় বিভিন্ন কৌটাজাত খাবারের বিভিন্ন উপাদান ও স্বাদ বিড়ালছানাকে নতুন খাবারে অভ্যস্ত হওয়ার পাশাপাশি অত্যন্ত দুর্দান্ত করে তোলে। বিড়ালের বিভিন্ন কৌটাজাত খাবারের মধ্যে আপনি আপনার বিড়ালছানাকে চিংড়ি, মাছ, বিভিন্ন প্রকারের মুরগির সাথে আরো কিছু খাবার খাওয়ানোর চেষ্টা করতে পারেন।
তাছাড়া এগুলোর সাথে কিছু অন্যান্য খাবার (যেমন শাকসবজি) রয়েছে যেগুলো আপনি একে দিতে পারেন। বিড়ালছানাকে এগুলো খাওয়ানোর সময় একটি চামচ তার প্রাথমিক পর্যায়ে ব্যবহার করতে পারেন। তবে বিড়ালছানা একটু বড় হয়ে গেলে অনেক ব্যক্তিই বিড়ালছানাকে পোষ মানানোর জন্য এদের খাদ্যতালিকায় কৌটাজাত খাবার ব্যবহার করে।
৩. ডিমের ভুনা
আপনি যখন রবিবার ছুটির দিন সকালে ডিমের ভুনা তৈরি করেন, তখন এর সাথে পনির মিশিয়ে ডিমের ভূনা বানাতে পারেন এবং আপনার বিড়ালছানাকে একটু করে খেতে দিতে পারেন। ডিমের ভুনা বিড়ালছানার জন্য অনেক পুষ্টিকর একটি খাবার এবং কমবেশি প্রত্যেক বিড়ালছানাই এটি খেতে পছন্দ করে।
তবে ডিমের ভুনা বানানোর আগে মনে রাখবেন যে ডিমের ভুনাটি আপনি আপনার বিড়ালছানার জন্য বানাচ্ছেন সেটিতে যেন লবণ, মরিচ কিংবা মশলা যোগ করা না হয়।
( আরো পড়ুন যদি আপনার বিড়াল গরম পানিতে বা আগুনে পুড়ে যায়)
৪. রান্না করা তাজা মাছ
আপনি যখন খাবেন তখন যদি আপনার খাবার টেবিলে রান্না করা তাজা মাছ আপনার বিড়ালছানার সাথে ভাগ করে নেন তাহলে আপনার বিড়ালছানা খুব খুশি হবে। তাই আপনার খাবার টেবিলে যদি বোয়াল মাছ, মাগুর মাছ, স্যালমন বা টনা মাছ থাকে, তাহলে এক টুকরো আপনি আপনার বিড়ালছানাকে দিতে পারেন। এই মাছগুলো বিড়ালছানার জন্য খুব উপকারী। তাছাড়া মাছ বিড়ালছানার খুব প্রিয় খাদ্য।
৫. রান্না করা মাংস
রান্না করা গরুর মাংস, মুরগির মাংস, টার্কি ও ভেড়ার মাংস বা অন্যান্য যেকোনো চর্বিহীন মাংস আপনার বিড়ালছানাকে বিনা দ্বিধায় দিতে পারেন। তবে চর্বিযুক্ত মাংস, চর্বিযুক্ত ভাজা মাংস এবং নাইট্রেট বা প্রিজারভেটিভযুক্ত মাংস বিড়ালছানার থেকে সবসময় এড়িয়ে চলুন।
বিড়ালছানার রান্না করা মাংসে মরিচ, বেকন বা সসেজ দিবেন না কেননা এগুলো তার পরিপাকতন্ত্রকে হজমে বিপর্যয় ঘটিয়ে জটিল ডায়রিয়া সৃষ্টি করে থাকে। আপনি যখন তাকে মাংস খেতে দিবেন, তখন সেগুলো ছোট ছোট টুকরো টুকরো করে দিবেন। কিছু বিড়ালছানা লোভী হয় এবং যখন গোগ্রাসে মাংস গিলে তখন বড় টুকরা গলায় আটকে দম বন্ধ হতে পারে।
৬. সবুজ স্যালাদ
যদিও বিড়ালরা মাংসাশী প্রাণী, তার মানে এই না যে মাংসাশী বলেই এদের শুধুই মাংস খেতে হবে। আপনার বিড়ালছানার খাদ্যতালিকায় আপনি কিছু শাকসবজিও যোগ করতে পারেন যেগুলো বিড়ালছানার ফাইবার, কিছু ভিটামিন ও খনিজের যোগান দিবে। তাই এদের খাদ্যতালিকায় আপনি কিছু শীতকালীন সবজি যেমন ব্রোকোলি ক্রসিফেরীর স্যালাদ হিসেবে দিতে পারেন।
৭. কুমড়া
আপনি যদি আপনার পরিবারের জন্য কুমড়া রান্না করেন তবে আপনার বিড়ালছানার জন্য কিছুটা আলাদা করে রাখতে পারেন। কুমড়ার একটি ছোট ফালি করে একটি স্যাঁতসেঁতে তোয়ালে দিয়ে মুড়িয়ে মাত্র কয়েক সেকেন্ডের জন্য রান্ন না করে মাইক্রোওয়েভে রাখুন। এটি ঠান্ডা না হওয়া পর্যন্ত অপেক্ষা করুন এবং তারপরে আপনার বিড়ালছানাকে একটু খেতে দিয়ে বাকিটা অন্য সময়ে খাওয়ানোর জন্য ফ্রিজে রেখে দিতে পারেন।
৮. বিড়ালের ঘাস
পোষা প্রাণীর দোকান এবং এমনকি মাঝে মাঝে মুদির দোকানগুলোতেও বিড়ালছানার খাওয়ার উপযোগী কিছু ঘাস পাওয়া যায়। এগুলো আপনি সংগ্রহ করে বাসায় নিয়ে আসতে পারেন। ঘাসের মধ্যে আপনি সাধারণত বিড়ালছানাকে গমের গাছ খাওয়াতে পারেন। ঘাসে আপনার বিড়ালছানার জন্য উপকারী বিভিন্ন ফাইবার, ভিটামিন এবং খনিজ রয়েছে। এজন্য অনেক বিড়ালছানা ঘাস খেতে খুব মজা পায়।