বিড়ালের ডিপথেরিয়া রোগের লক্ষণ

বিড়ালের ডিপথেরিয়া রোগের লক্ষণ — বর্তমান সময়ে পোষা প্রাণীদের মধ্যে বিড়াল হলো আমাদের সকলেরই খুব পছন্দের একটি প্রাণী। তবে বিড়াল নিয়ে যেমন বিভিন্ন লোক সংস্কার রয়েছে, তেমনি রয়েছে নানান লোককথা ও লোকবিশ্বাস। তবুও বিড়াল আজকাল কম বেশি সকলেরই বাড়িতে পাওয়া যায়। কেননা বিড়ালের মতো আদুরী বোধ হয় আর অন্য কোন প্রাণী আজো নেই।

তবে আপনি জানেন কি বিড়াল থেকে কতটা বিপদ হতে পারে আপনার? যদি না জেনে থাকেন, তাহলে আজকের এই আর্টিকেলটি সম্পূর্ণ পড়ে শেষ করুন। বিড়াল পুষে আপনার কী বিপদ বা ঝুঁকি হতে পারে, এটা নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা করা হয়েছে আজকের আর্টিকেলে।

বিড়াল থেকে কতটা বিপদ হতে পারে?

আপনি কি জানেন বিড়াল হলো ডিপথেরিয়া রোগের বাহক। তাছাড়া বিড়াল একটি পরজীবী জীবাণু বহন করে থাকে, যার নাম হলো “টক্সোপ্লাজমা গনডি”। টকসোপ্লাজমসিস নামে এক ধরনের এককোষী পরজীবীর দ্বারা সৃষ্ট রোগের নামই হলো “টক্সোপ্লাজমা গনডি”। টকসোপ্লাজমসিস পরজীবী জীবাণু সুস্থ কিংবা অসুস্থ সব ধরনের বিড়ালেরই মুখে ও মলমুত্রে থাকে। তাছাড়া মাঝে মাঝে বিড়ালের শরীরেও লেগে থাকে এই পরজীবী জীবাণু। আমরা যখন আমাদের বিড়ালদের কোলে নেই, হাত দিয়ে তাদের আদর করি, তখন আমাদের হাতের সংস্পর্শে আসা এ জীবাণু খাবার ও পানীয়ের মাধ্যমে আমাদের শরীরেও খুব সহজে প্রবেশ করতে পারে।

(আরো পড়ুন যদি আপনার বিড়াল বমি করতে থাকে। এক্ষেত্রে আপনার করনীয় সম্পর্কে জানুন)

“টক্সোপ্লাজমা গনডি” হলে কী হয়?

ক্যালিফোর্নিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের পশু রোগতত্ত্বের গভেষক ড. বার্টার এর তথ্যমতে, “টক্সোপ্লাজমা গনডি” রোগ হলে মহিলাদের বার বার গর্ভপাত হওয়ার ঝুঁকি রয়েছে। তাছাড়া এ রোগের কারণে গর্ভবতী মহিলারা মৃত শিশু জন্ম নিতে পারে। অন্যদিকে এ রোগের ফলে পুরুষদের মাথায় সিস্ট হতে পারে। সিস্ট হলে পুরুষদের মাঝে মূল যে লক্ষণটি দেখা দেয় সেটি হল কয়েকদিন ধরে পুরুষদের অতিরিক্ত মাথা ব্যথা হয়।

তবে ব্যথা যদি দীর্ঘস্থায়ী হয় কিংবা দিনের পর দিন বাড়তে থাকে তাহলে অবশ্যই চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়া উচিত। সিস্ট হয়েছে কিনা সেটা পরীক্ষা করার জন্য চিকিৎসকেরা সিটি স্ক্যান, এমআরআই এর মতো একাধিক টেস্ট করতে বলে থাকে। কিন্তু যদি কারো ব্রেন সিস্ট হয়, তাহলে রোগীর স্বাভাবিক জীবন যাপন ব্যাহত হয়।

শিশুরা টকসোপ্লাজমসিস পরজীবী বাহক বিড়ালের সঙ্গে ঘনিষ্ঠ হলে শিশুদের লসিকাগ্রন্থি ফুলে গিয়ে জ্বর হয়, প্লীহা বড় হয়ে যায়। আশঙ্কার বিষয় হলো বেশির ভাগ বিড়ালের শরীরেই এই জীবাণু থাকতে পারে। ফলে আপনার পোষা বিড়ালের কাছ থেকেই এমন মারাত্মক রোগে আক্রান্ত হওয়ার আশঙ্কা থাকে আপনিসহ আপনার পরিবার।

(আরো পড়ুনঃ আপনার বিড়াল কি শ্বাসকষ্টে ভুগছে? )

বিড়ালের লোম থেকে ডিপথেরিয়া

তাছাড়া বিড়ালের লোম থেকে ডিপথেরিয়া এবং হাঁপানী হওয়ার যথেষ্ট সম্ভাবনা থাকে। মোটকথা বিড়ালের ঘনিষ্ঠ সংস্পর্শে হাঁপানী, ডিপথেরিয়া, বাইপোলার ডিজঅর্ডার (সহজ ভাষায় বলতে, দীর্ঘসময় ধরে একজন ব্যক্তির মুডের, আবেগের বা মানসিক অবস্থার বিপরীতমুখী পরিবর্তন ঘটতে থাকলে তাকে বাইপোলার ডিসঅর্ডার বলে), সিজোফ্রেনিয়া রোগ হতে পারে ।

উল্লিখিত সমস্যাগুলোর কথা যুক্তরাষ্ট্রের বিশেষ বিজ্ঞানীদের দ্বারা গভেষণা করে তারপর পিটিআই সাময়িকীতে এই তথ্য জানানো হয়েছে। তাছাড়া যুক্তরাষ্ট্রের স্ট্যানলি মেডিকেল রিসার্চ ইনস্টিটিউটের গবেষকেরা শৈশবে বিড়াল পোষার সঙ্গে সিজোফ্রেনিয়ার যোগসূত্র নিয়ে আগের বেশ কিছু গবেষণার তথ্য-উপাত্ত পর্যালোচনা করে দেখেছেন যে, শৈশবে বিড়াল পোষার অভ্যাস ছিল এমন কিছু ছেলে কিংবা মেয়েদের মধ্যে পরবর্তী জীবনে মানসিক রোগ দেখা দেওয়ার ঝুঁকি থাকে।

গবেষকেরা বলছেন, তিনটি আলাদা গবেষণায় দেখা গেছে যে শৈশবে বাড়িতে বিড়াল পোষার রীতি ছিল এমন পরিবারের ছেলে মেয়েদের পরবর্তী জীবনে সিজোফ্রেনিয়া বা অন্য মানসিক রোগে আক্রান্ত হতে বেশি দেখা যায়। আর এ গবেষণা প্রতিবেদনটি প্রকাশিত হয়েছে সিজোফ্রেনিয়া বুলেটিন নামক পত্রিকায়।

Corynebacterium ulcerans কী?

Corynebacterium ulcerans হল এক ধরনের ব্যাকটেরিয়া যা C. ডিপথেরিয়ার সাথে সম্পর্কিত। আর এই ব্যাকটেরিয়া ডিপথেরিয়ার রোগের প্রধান কারণ। C. ulcerans ব্যাকটেরিয়া একবার কারো শরীরে প্রবেশ করলে তার ভিতরে কিছু বিষাক্ত পদার্থ তৈরি করতে পারে যা ডিপথেরিয়া রোগ সৃষ্টি করে থাকে। তাই C. ulcerans ব্যাকটেরিয়া বর্তমানে কিছু অঞ্চলের মানুষদের মধ্যে ডিপথেরিয়া জাতীয় রোগের অন্যতম প্রধান কারণ।

বর্তমানে ডিপথেরিয়া টিকা

তবে বর্তমানে ডিপথেরিয়া টিকা দেওয়ার সাফল্যের সাথে সব জায়গা থেকে দেয়া সম্ভব। সাধারণত C. ulcerans দূষিত দুধ কিংবা কোনো দুগ্ধজাত দ্রব্য খাওয়ার মাধ্যমে ছড়ায়। তবে কুকুর এবং বিড়াল থেকে C. ulcerans দ্বারা সংক্রমণের হার অনেক বেশি বেড়েছে বলে জানা যায়। কিন্তু অনেক মানুষই এটা এখনো্ জানে না যে, বিড়াল থেকেই এ রোগটি ছড়াতে পারে।

সাম্প্রতিক এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে যে, জার্মানির একজন মহিলা ডিপথেরিয়ার মতো রোগে আক্রান্ত হয় যার মধ্যে গলা ব্যথা, কানে ব্যথা, কর্কশতা ও নাক বন্ধ হয়ে যাওয়ার মতো সমস্যার দেখা দিয়েছে। সেই মহিলার নাক ও গলা থেকে একটু মাংস পরীক্ষা করে এটা জানা যায় যে, তিনি C. ulcerans ব্যাকটেরিয়া দ্বারা আক্রান্ত। তার এই C. ulcerans ব্যাকটেরিয়া দ্বারা আক্রান্ত হওয়ার কারণ জানতে তার বাড়িতে থাকা একটি বিড়ালের নাক ও গলা কিছু লোম নমুনা হিসেবে সংগ্রহ করা হয় এবং ল্যাবে পরীক্ষা করে দেখা যায় যে, ওনার বিড়ালটিও C. ulcerans ব্যাকটেরিয়া দ্বারা আক্রান্ত।

C. ulcerans ব্যাকটেরিয়া

তবে এই ধরনের পরীক্ষার মাধ্যমে আমরা নিশ্চিত প্রমাণ করতে পারব না যে বিড়ালটিই এ মহিলাটিকে রোগে আক্রান্ত করেছে। যেহেতু বিড়ালটি সুস্থ ছিল এবং মহিলাটির অসুস্থ হওয়ার পরে এ পরীক্ষা করা হয়েছিল, তাই চিকিৎসকেরা নিশ্চিতভাবে বলতে পারে নি যে বিড়ালটি এই ব্যাকটেরিয়ার একমাত্র উৎস ছিল। কেননা C. ulcerans ব্যাকটেরিয়া দ্বারা বিড়ালটিও সংক্রমিত হতে পারে। যা আগে থেকে মহিলার মধ্যেও থাকতে পারে।

যাইহোক C. ulcerans ব্যাকটেরিয়া যে কুকুর ও বিড়াল এর মতো পোষা প্রাণীর সাথে সম্পর্কিত এবং C. ulcerans ব্যাকটরিয়া যে সুস্থ বিড়ালের মধ্যেও থাকতে পারে, এই তথ্যটি কিন্তু যুক্তিসঙ্গত।

তবে এই প্রতিবেদনটি ছিল অত্যন্ত চমৎকার একটি প্রতিবেদন। কেননা এর ফলে বিড়ালটি দ্বারা মহিলাটি সংক্রমিত হওয়ার একটি সম্ভাবনাও তৈরি হয়। তাই বিড়াল পোষা অত্যন্ত আনন্দের একটি কাজ হলেও কিন্তু এটির মাধ্যমে যে আপনার ডিপথেরিয়া রোগ হতে পারে এটা চিন্তা করা সব সময় দরকার। তাছাড়া এটি মনে রাখা গুরুত্বপূর্ণ যে C. ulcerans ব্যাকটেরিয়া কিন্তু একটি মারাত্মক ব্যাকটেরিয়া, যদিও এটি একটি বিরল ব্যাকটেরিয়া।

( বিড়ালের হিট কীভাবে কমায় জানতে চান? তাহলে পড়ুন আমাদের এই আর্টিকেলটি)

মেডিকেল বিশেষজ্ঞ

আপনি যখনই মেডিকেল বিশেষজ্ঞ কোনো এক ব্যক্তিকে C. ulcerans ব্যাকটেরিয়া সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করবেন, তিনি হয়তো বলবেন যে এটি নতুন আবিষ্কৃত একটি বিরল ব্যাকটেরিয়া। এক্ষেত্রে আমরা যেহেতু এখন বিভিন্ন গভেষণা ও প্রতিবেদন থেকে জানতে পারছি যে, C. ulcerans ব্যাকটেরিয়াটি মানুষের ডিপথেরিয়া সংক্রমণের কারণ হতে পারে এবং আমাদের পছন্দের বিড়াল থেকেই এ সংক্রমণ হতে পারে, তাই C. ulcerans ব্যাকটেরিয়াটি বিরল হলেও আপনাকে কখনো অসতর্ক হওয়া যাবে না। তাছাড়া C. ulcerans ব্যাকটেরিয়া যেহুতু আজকাল অনেক বিড়ালের মধ্যেই পাওয়া যায় এবং অনেক মানুষই এর দ্বারা সংক্রমিত হতে পারে, বিশেষ করে আক্রান্ত বিড়ালের সংস্পর্শে থাকা মালিকই এই ঝুঁকিতে বেশি থাকে, তাই আপনার বিড়ালটি C. ulcerans ব্যাকটেরিয়া দ্বারা সংক্রমিত কি না এট পরীক্ষা করে নেয়া ভালো।

বিড়ালের ডিপথেরিয়া রোগের লক্ষণ কী কী?

যদিও C. ulcerans ব্যাকটেরিয়া দ্বারা সংক্রমিত বেশিরভাগ বিড়ালকে অসুস্থ বলে মনে হয় না, তবে কিছু কিছু বিড়াল জ্বরের সাথে হালকা অসুস্থতা অনুভব করতে পারে যা প্রায় 2-3 দিন স্থায়ী হযয়ে থাকে। তবে অনেক ক্ষেত্রে আপনার বিড়াল C. ulcerans ব্যাকটেরিয়া দ্বারা সংক্রমিত হলে আরও গুরুতর লক্ষণ সৃষ্টি করতে পারে, যার মধ্যে রয়েছে বমি, চোখ লাল হয়ে যাওয়া, লসিকাগ্রন্থি ফুলে যাওয়িা, অল্পতেই ক্লান্তি ভাব ও ক্ষুধামন্দা।

Leave a Comment