বিড়ালের ত্বকে ব্যাকটেরিয়া জনিত সংক্রমণ কাকে বলে?
বিড়ালের ত্বকে ব্যাকটেরিয়াজনিত সংক্রমণ হলে কি করবেন? বিড়ালের ত্বকের কাজ হলো ব্যাকটেরিয়ার আক্রমণ কে প্রতিহত করা। যদি বিড়ালের ত্বক নষ্ট হয়ে যায় তাহলে তা ব্যাকটেরিয়ার বিরুদ্ধে লড়াই করতে পারেনা এবং বিড়ালের দেহের অভ্যন্তরীন অংশে ব্যাকটেরিয়া প্রবেশ করতে পারে। এতে বিড়ালের বিভিন্ন রোগ বালাই হওয়ার সম্ভাবনা থাকে।
বিড়ালের ত্বকে ব্যাকটেরিয়াজনিত সংক্রমণকে পাইডার্মা বলা হয়ে থাকে। এখানে “পাই” এবং “ডার্মা” দুটি ফ্রেস দিয়েই জীবানু দ্বারা সৃষ্ট ত্বকের রোগকে বুঝানো হয়ে থাকে। চিকিৎসা শাস্ত্রের ভাষায় “পাই (Pyo)” দ্বারা পুঁজ এবং “ডার্মা (Derma)” দ্বারা ত্বক বোঝানো হয়। অর্থাৎ বলা যায় পাইডার্মা (Pyoderma) শব্দের অর্থ হলো “ত্বকের পুঁজ”। বিড়ালের ত্বকে সে সকল ব্যাকটেরিয়া বাস করে তাদের সংখ্যা অত্যাধিক মাত্রায় বৃদ্ধি পেলে বিড়ালের পাইডার্মা হতে পারে। এছাড়া বাহ্যিক কোন ব্যাকটেরিয়া আক্রমণ করলেও পাইডার্মা হতে পারে। পাইডার্মায় সাধারণত বিড়ালের তুলনায় কুকুরেরা বেশি আক্রান্ত হয়ে থাকে।
যদি পাইডার্মা খেয়াল করার সাথে সাথেই প্রয়োজনীয় চিকিৎসার ব্যাবস্থা না করা হয় তাহলে এই সংক্রমণ আস্তে আস্তে আরো বাড়তে পারে এবং বিড়াল মারাত্মক অসুস্থতায় ভুগতে পারে। তাই এর লক্ষন দেখা মাত্রই যথাযথ চিকিৎসার ব্যাবস্থা করা উচিৎ।
বিড়ালের ত্বকের ব্যাকটেরিয়াজনিত সংক্রমণের প্রকারভেদ
সাধারনত বিড়ালের ত্বকের উপরিভাগে এই ব্যাকটেরিয়াজনিত সংক্রমণ গুলো হইয়ে থাকে। তবে কখনো কখনো ত্বকের গভীরে কিংবা অভ্যন্তরীন টিস্যুতে, যেমন- এপিডার্মিস বা ডার্মিস এবং সাবকুটিস অংশে ব্যাকটেরিয়াজনিত সংক্রমণ হতে পারে।
ত্বকের উপরিভাগে সংক্রমণ
এই ধরনের সংক্রমণ গুলো বিড়ালের ত্বকের উপরিভাগে হয়ে থাকে। ব্যাকটেরিয়া অতিমাত্রায় বৃদ্ধি পেলে ত্বকের উপরিভাগে লালভাব থাকতে পারে এবং বিড়াল ত্বকের ভাঁজে জ্বালা অনুভব করতে পারে।
সুপারফিশিয়াল
এই ধরনের সংক্রমণ বিড়ালের ত্বকের উপরিভাগের চেয়ে এপিডার্মিস এবং লোমকূপের গভীরে হয়ে থাকে। এটি সাধারণত স্ট্যাফিলোকক্কাস ব্যাকটেরিয়া দ্বারা সৃষ্ট হয়।
ত্বকের গভীরে সংক্রমণ
এই ধরনের সংক্রমণ গুলো কম দেখা যায়। তবে এগুলো বেশি ক্ষতিকর। কারণ, এটি ডার্মিস পর্যন্ত পৌঁছে যায় এবং যার ফলে সেলুলাইটিস হতে পারে অথবা রক্তে ব্যাকটেরিয়া সংক্রমণ হতে পারে। যদি সংক্রমণ ক্রমাগত বাড়তে থাকে অথবা যথাযথ চিকিৎসার ব্যাবস্থা না করা হয় তাহলে এটি দেহের অভ্যন্তরীন ইমিউন ডিসফাংশন যেমন ফেলাইন ইমিউনোডেফিসিয়েন্সি ভাইরাস (এফআইভি) বা অ্যাটিপিকাল মাইকোব্যাকটেরিয়া সংক্রমণ তৈরি করতে পারে।
বিড়ালের কিছু কম রোগ সম্পর্কে জানতে ক্লিক করুন
বিড়ালের ত্বকের ব্যাকটেরিয়া সংক্রমণের লক্ষণ
বিড়ালের ত্বকের ব্যাকটেরিয়ার সংক্রমণের লক্ষন গুলো নিচে উল্লেখ করা হলো-
- বিড়ালের ত্বকে অত্যাধিক মাত্রায় খুশকি হতে পারে। বিশেষ করে লেজের কাছে পিঠের পিছনের অংশে।
- ত্বকে ছোট, শক্ত দাগ (মিলারি ডার্মাটাইটিস)।
- বিড়ালের পশম ঝড়ে পড়া।
- ত্বকে লালচে ভাব তৈরি হওয়া।
- ত্বকে ঘা বা ক্ষত তৈরি হওয়া।
- ঘা থেকে রক্ত বা পুঁজ পড়া।
- বিড়ালের ত্বকে দূর্গন্ধ হওয়া।
- বিড়ালের দেহে চুলকানি হওয়া। বিড়াল তা ত্বকে অত্যাধিক মাত্রায় চাটতে থাকলে বা কোন কিছুতে তা শরীর অথ্যাধিক মাত্রায় ঘষতে থাকলে বুঝবেন বিড়ালের ত্বকে চুলকানি হচ্ছে।
বিড়ালের ত্বকে ব্যাকটেরিয়া জনিত সংক্রমণের কারণ
বিড়ালের ত্বকে বিভিন্ন কারণে সংক্রমণ হতে পারে। যেমন- এলার্জি, বিড়ালের চিবুকে ব্রণ, মাছি বা অন্যান্য ব্যাকটেরিয়ার কারণে। বিড়ালের দেহের যে অংশগুলো গরম থাকে এবং আদ্রতা আটকে রাখে সে সব অংশ যেমন ত্বকের ভাঁজে এই ধরনের সংক্রমণ হয়ে থাকে।
বিড়ালের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতাকে কমিয়ে দেয় এমন রোগ যেমন ফেলাইন ইমিউনোডেফিসিয়েন্সি ভাইরাস (এফআইভি) বা ফেলাইন লিউকেমিয়া ভাইরাস (এফইএলভি) কারণে বিড়ালের দেহে ব্যাকটেরিয়া অত্যাধিক মাত্রায় বৃদ্ধি পায় ফলে বিড়ালের ত্বকে ব্যাকটেরিয়া সংক্রমণ হয়।
আঁচড় বা কামড়ের কারণে তৈরি হওয়া ক্ষতগুলো বিড়ালের ত্বকের প্রতিরক্ষা ক্ষমতাকে দূর্বল করে ফেলে ফলে এই সকল অংশে ব্যাকটেরিয়া আক্রমণ করতে পারে এবং তা সংক্রমণে রূপ নিতে পারে। এই ধরনের সংক্রমণের ফলে বিড়ালের ত্বকে ফোঁড়া হতে পারে। হাইপারথাইরয়েডিজম (Hyperthyroidism) এবং হাইপারঅ্যাড্রেনোকোর্টিসিজম (Hyperadrenocorticism) বা কুশিং ডিজিজ (Cushing’s disease) ত্বকের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা এবং ব্যাকটেরিয়া প্রতিহত করার ক্ষমতা কমিয়ে দেয়। ফলে বিড়াল ব্যাকটেরিইয়া জনিত সংক্রমণে আক্রান্ত হয়। গ্রুমিং না করা, বিড়ালের ত্বক নোংড়া এবং তৈলাক্ত রাখা, বিড়ালের লোম ম্যাটিং করার কারণেও বিড়াল ব্যাকটেরিয়া জনিত সংক্রমণে ভুগতে পারে।
বিড়ালের দেহের সবচেয়ে কমন ব্যাকটেরিয়াল স্ট্রেইন
বিড়ালের দেহের সবচেয়ে কমন ব্যাকটেরিয়াল স্ট্রেইনগুলো হলো-
- স্ট্যাফিলোকক্কাস সিউডিন্টারমিডিয়াস (Staphylococcus pseudintermedius)। এগুলো সাধারণত ত্বকে পাওয়া যায়।
- পাস্তুরেলা মাল্টোসিডা (Pasteurella multocida)। সাধারণত বিড়ালের মুখ এবং লালায় পাওয়া যায়।
কিভাবে পশুচিকিৎসক বিড়ালের ত্বকের ব্যাকটেরিয়া জনিত সংক্রমণ সনাক্ত করেন?
একজন পশুচিকিৎসক সাধারণত বিভিন্ন ক্লিনিকাল লক্ষণ এবং ডায়াগনষ্টিক পরীক্ষার মাধ্যমে বিড়ালের দেহের ব্যাকটেরিয়া জনিত সংক্রমণ নির্ণয় করে থাকেন।
নিচে কিছু ডায়গনষ্টিক পরীক্ষা বর্ণনা করা হলো-
স্কিন কাইটোলজি
আপনার পশুচিকিৎসক ত্বকের ক্ষত থেকে নমুনা নিতে পারেন এবং ব্যাকটেরিয়া বা শ্বেত রক্তকণিকার উপস্থিতি বা অনুপস্থিতি নিশ্চিত করতে একটি মাইক্রোস্কোপের নীচে নমুনা রেখে তা পর্যবেক্ষণ করতে পারেন।
স্কিন স্ক্র্যাপিং
স্কিন স্ক্রাপিং করতে হয় বিড়ালের দেহে কোন মাইট বা পরজীবির আক্রমণ হয়েছে কিনা তা জানার জন্য। একটি জীবাণুমুক্ত ব্লেড দিয়ে বিড়ালের ত্বকে গভীর করে স্ক্র্যাপ করা হয়। এতে বিড়ালের দেহের রক্তের নমুনা নিয়ে সনাক্ত করা যায় যে বিড়ালের দেহে কোন ধরনের পরজীবির আক্রমণ হয়েছে কিনা।
ল্যাম্পের মাধ্যমে
সবুজ-হলুদ বিশেষ ল্যাম্প এর মাধ্যমে দাদ এর মত সংক্রমণ গুলো নির্ণয় করা যায়।
ট্রাইকোগ্রাম
কোনো ছত্রাকের স্পোর বা মাইট খুঁজে বের করার জন্য প্লাক করা লোম একটি মাইক্রোস্কোপের নিচে পরীক্ষা করা হয়ে থাকে।
এছাড়াও আরো বেশ কিছু ডায়াগনসিস পরীক্ষা রয়েছে যেগুলোর মাধ্যমে বিড়ালের দেহে ব্যাকটেরিয়ার উপস্থিতি আছে কিনা তা নির্ণয় করা যায়।
বিড়ালের দেহে ক্ষত হলে করণীয় জানতে পড়ুন
বিড়ালের দেহের ব্যাকটেরিয়াজনিত সংক্রমণের চিকিৎসা
বিড়ালের ব্যাকটেরিয়াজনিত সংক্রমণের চিকিৎসা নির্ভর করে বিড়ালের ব্যাকটেরিয়া সংক্রমণের ডায়াগনসিস পরীক্ষার উপর।
স্টাফিলোকক্কাস সিউডিনটারমেডিয়াস দ্বারা বিড়ালের দেহে সবচেয়ে বেশি সংক্রমণ হয়ে থাকে। এই ধরণের সংক্রমনের জন্য সবচেয়ে কার্যকর চিকিৎসা পদ্ধতি হচ্ছে এন্টিবায়োটিক। যেমন-
- ক্লিন্ডামাইসিন
- সেফালেক্সিন
- ক্লেভামক্স®
- ট্রাইমেথোপ্রিম সালফা
এছাড়া অন্যান্য ওষুধের মধ্যে রয়েছে শ্যাম্পু, ক্রিম, জেল, মলম, স্প্রে, ওয়াইপস । এগুলো সুপারফিসিয়াল বা হালকা ত্বকের সংক্রমণের জন্য কার্যকর । এগুলোর উপাদানগুলো ব্যাকটেরিয়া সংক্রমণ দূর করতে বেশ কার্যকর ভূমিকা পালন করে।