বিড়াল খাবার না খেলে করণীয়

বিড়াল খাবার না খেলে করণীয়– অনেক বিড়ালের ক্ষেত্রেই দেখা যায় যে, কিছু‍দিন পর এরা খাওয়া দাওয়া অনেকটাই কমিয়ে দেয় কিংবা একেবারেই কয়েকদিন যাপত খায় না। আর এ রকম লক্ষণ হয়তো আমরা আমাদের বাড়িতে থাকা বিড়ালটির মধ্যেও লক্ষ্য করেছি। বিড়ালরা যখন কোনো কিছু খেতে অনীহা প্রকাশ করে কিংবা আগের তুলনায় অনেক কম খায়, তখন সেটা নিয়ে অনেকে ব্যঙ্গ করে কিংবা পরিহাসের দৃষ্টিতে দেখে। কিন্তু আপনার বিড়াল যখন সত্যিই তুলনামূলকভাবে কম খাবে, তখন সেটা কিন্তু তার মারাত্মাক সমস্যার কারণে হতে পারে কিংবা কোনো সমস্যার সূত্রপাতের ইঙ্গিতও হতে পারে। তাই আপনার বিড়াল খাবার না খেলে কখনোই এটাকে আপনার সহজভাবে নেয়া উচিত নয়।

মূলত বিড়ালরা যখন পর্যাপ্ত পরিমাণে খাবার খায় না, তখন এরা এদের শরীরে থাকা চর্বির ওপর নির্ভর করে থাকে। চর্বি থেকে শক্তি উৎপাদনের কাজটি সংঘটিত হয় কিডনিতে। আর এই প্রক্রিয়াটি সম্পন্ন করতে শরীরে পর্যাপ্ত পরিমাণে প্রোটিনের দরকার হয়। তাই কোনো বিড়ালের খাওয়া-দাওয়া কম হওয়ার কারণে যার ওজন অনেক হ্রাস পায়, তার শরীরে প্রোটিনের ঘাটতি দেখা দেয় এবং তার কিডনিতে চর্বির আধিক্য ঘটে। এর ফলে বিড়ালটি মারাত্মক শারীরিক অবনতির শিকার হয় এবং চিকিৎসা বিজ্ঞানে বিড়ালদের মধ্যে সৃষ্ট এ রোগটির নাম হলো হেপাটিক ডায়াগনিস। এই রোগে বিড়ালের কিডনি বিকল হয়ে তার মৃত্যুর কারণও হতে পারে।

তবে একটি বিড়ালের হঠাৎ ক্ষুধামন্দা এটাই ইঙ্গিত করে যে সে হয়তো অসুস্থ। এমতাবস্থায় আপনার উচিত হবে অতি দ্রুত আপনার পশু চিকিৎসের পরামর্শ করে দেখা। যত তাড়াতাড়ি আপনি বিড়ালের মধ্যে কোনো সমস্যা আছে কি না তা চিহ্নিত করবেন, তত তাড়াতাড়ি এটিকে সুস্থ করতে আপনি সক্ষম হবেন।

কেন বিড়ালরা খাবার খেতে চায় না?

১. অসুস্থতা:

প্রাথমিক অবস্থায় বিড়ালের ক্ষুধামন্দা এটাই নির্দেশ করে যে সে হয়তো কোনো কারণে অসুস্থ। এজন্য আপনার বিড়াল যদি হঠাৎ খাওয়া-দাওয়া কমিয়ে দেয় কিংবা না খায়, সেক্ষেত্রে বিড়ালটির প্রতি বিশেষ মনোযোগ দিন। কেননা এর ফলে বিভিন্ন সমস্যা হতে পারে। যেমন অভ্যন্তরীণ প্রহাদ, কিডনি বিকল, অন্ত্রের সমস্যা ও এমনকি ক্যানসার। তবে আপনার বিড়ালটি যদি দাঁতের ব্যাথাজনিত কারণে খাওয়া বন্ধ করে দেয় তবে সেটি বড়ো কোনো সমস্যা না।

২. সাম্প্রতিক টিকাদান:

আপনি কি আপনার বিড়ালকে কোনো টিকা দেয়ার পর এর মধ্যে ক্ষুধামন্দা ভাব দেখেছেন? যদি দেখে থাকেন তাহলে সেটি টিকার পাশ্ব-প্রতিক্রিয়ার ফলে হতে পারে। যদিও ভ্যাকসিন বা টিকা লাখো প্রাণীর জীবনরক্ষায় ব্যবহৃত হয়, তবু এটি কিছু কিছু প্রাণীর মধ্যে পার্শ্বপ্রতিক্রিয়ার প্রভাব ফেলে। ক্ষুধামন্দা হতে পারে এই পার্শ্বপ্রতিক্রিয়ার অন্যতম লক্ষণ যা সাধারণত ক্ষণস্থায়ী হয়ে থাকে। তাই টিকা দেয়ার পরে বিড়ালের মধ্যে ক্ষুধামন্দা দেখা দিলে সেটি নিয়ে বেশি দুশ্চিন্তার কোনো কারণ নেই।

৩. ভ্রমণ ও অপরিচিত জায়গা:

মানুষের মতোই বিড়ালরা হলো অভ্যাসের দাস। তাই আপনার বিড়ালের দৈনন্দিন রুটিনের সামান্য পরিবর্তনও হতে পারে এর ক্ষুধামন্দার কারণ। সাধারণত যখন বিড়ালদের নিয়ে অপরিচিত জায়গায় ভ্রমণ করা হয় তখন এদের মধ্যে এ সমস্যাটি দেখা দেয়। তবে কিছু কিছু বিড়ালের ক্ষেত্রে গাড়ি কিংবা প্নেনে ভ্রমণে এদের শারীরিক অসুস্থতা থেকে অনেক বেশি বমি ও দীর্ঘ দিন যাপত ক্ষুধামন্দা হতে পারে।

৪. মনস্তাত্ত্বিক সমস্যা:

যদি আপনার পশু চিকিৎসক এটা নিশ্চিত করে যে আপনার বিড়ালের কোনো মনস্তাত্ত্বিক রোগ নেই, তবে আপনার বিড়ালের ক্ষুধামন্দার কারণ হতে পারে উদ্বেগ কিংবা হতাশা। গৃহস্থলীর যে কোনো বিশেষ পরিবর্তন অনেক সংবেদনশীল বিড়ালের স্নায়ুবিক ক্রিয়াকলাপে ব্যাঘাত সৃষ্টি করে এবং মাঝে মাঝে আপনার পরিবারে বহিরাগত সদস্যের আগমণ কিংবা প্রিয় কোনো সদস্যের বহিরাগমণও একটি বিড়ালের আবেগে প্রভাব ফেলে।

এর ফলেও আপনার বিড়াল ক্ষুধাহীনতা প্রকাশ করতে পারে। এছাড়া সর্বদাই এটা মনে রাখবেন যে আপনার বিড়ালের দৈনন্দিন খাদ্যতালিকার পরিবর্তনও এর মধ্যে ক্ষুধামন্দার সৃষ্টি করতে পারে। তাই আপনার বিড়ালকে সব সময় অপরিবর্তনীয় খাদ্যতালিকায় অভ্যস্ত রাখুন।

( আরো পড়ুনঃ বিড়ালের জন্য তৈরি করুন ঘরোয়া খাবার)

বিড়াল খাবার না খেলে করণীয়

আপনার বিড়ালটি শারীরিক অসুস্থতা, মানসিক উদ্বিগ্নতার কারণে যদি কম খায়, তাহলে সেটা নিয়ে বেশি চিন্তার কোনো কারণ নেই, কেননা কয়েকদিন পরেই আপনার বিড়াল পুনরায় আগের মতো খাওয়া শুরু করবে। কিন্তু বিড়ালটি যদি একেবারে খাবার না খায়, তাহলে এতে বিড়ালের মারাত্মক শারীরিক বিপর্যয়ের কারণ হতে পারে।

এছাড়া আপনি যদি আপনার বিড়ালকে কোনো ডাক্তার নির্দেশিত খাদ্যতালিকা অনুযায়ী নিয়মিত খাওয়ানোর চেষ্টা করেন তবে আপনার বিড়ালটি নিয়মিত নির্দিষ্ট ধরণের খাবার খাওয়ার ফলে একসময় এই খাবারগুলো খেতে আগ্রহ প্রকাশ করে না। আর এটি বিড়ালের ক্ষুধামন্দার কারণ হতে পারে।

অসুস্থতা

প্রথমত আপনার বিড়াল যদি অসুস্থতার কারণে খাবার না খেয়ে থাকে, তবে আপনারে উচিত হবে আপনার বিড়ালকে নিয়ে কোনো পশুচিকিৎসকের শরণাপন্ন হওয়া। তিনি আপনাকে আপনার বিড়ালের জন্য সবচেয়ে পছন্দের খাদ্যতালিকার পাশাপাশি দৈনন্দিন রুটিনের কিছু পরিবর্তনের কথা বলতে পারেন।

গবেষণায় দেখা গেছে কিছু বিড়াল অসুস্থতার কারণে খাবার না খেলে এদের খাদ্যতালিকার কিছুটা পরির্তন করে টিনজাত কোনো সুস্বাদু খাবার দিলে এরা অনেক বেশি আগ্রহের সাথে আগের চেয়ে আরো বেশি খায়।

তবে বিড়ালরা অসুস্থতার কারণে খাবার না খেলে এ রকম ক্ষেত্রে পশুচিকিৎসকরা কিছু ওষুধ পত্র লিখে দিতে পারেন যা ক্ষুধা বাড়াতে কিংবা খাদ্যের প্রতি রুচি তৈরিতে কাজ করে। অন্যথায় পশুচিকিৎসকরা আপনার বিড়ালকে সিরিঞ্জে করে তরল খাদ্য খাওয়ানোর পরামর্শ দেয়। তবে কেউ কেউ বিড়ালের পর্যাপ্ত পুষ্টি নিশ্চিত করতে একটি ফিডিং টিউব বসানোর পরামর্শ দিতে পারে।

তবে আপনার বিড়াল যদি কোনো প্রকার কোনো অসুস্থ না থাকে, তাহলে অঅপনি বেশি কিছু কলাকৌশল অবলম্বন করে আপনার বিড়ালকে খেতে উৎসাহিত করার চেষ্টা করতে পারেন।

(আরো পড়ুনঃ যে খাবারগুলো বিড়ালের জন্য সমস্যার কারন হয়ে যেতে পারে)

টিনজাত খাবার

আপনি হয়তো একটা সময় পরে এটা উপলব্ধি করতে পারবেন যে, আপনরর বিড়াল টিনজাত খাবারে প্রতি অনেক বেীশ আগ্রহ প্রকাশ করছে। এমতাবস্থায় আপনি শুধু অল্প পরিমাণে এদের এই খাবারগুলি খেতে দিতে করতে। কেননা বেশি পরিমাণে খেতে দিলে ভিটামিনের অত্যধিক পরিমাণের কারণে আপনার বিড়ালের ক্ষতি করতে পারে।

তাই আপনার বিড়ালকে মানুষের খাবারের উপর অভ্যস্ত করার পরিবর্তে ভালো মানের টিনজাত খাবারের দিকে উৎসাহিত করে দেখতে পারেন। তবে যে খাবারগুলো আপনি দিবেন সেগুলোতে যেন পেঁয়াজ না মশলা দেয়া না হয়। তবে আপনি আপনার বিড়ালকে রান্না করা ডিম বা মাছ খেতে দিতে পারেন, কারণ এগুলো বিড়ালের খুব লোভনীয় খাবার।

যদি আপনার বিড়ালকে রান্না করা ডিম বা মাছ দেয়ার পরও সে না খায় তাহলে তাকে তাজা কোনো শাক সবজি খেতে দিতে পারেন। কিন্তু যে শাক-সবজিগুলো আপনি দিবেন সেগুলো যেন বাসি না হয়। যদিও বাসি হলে সে নিজেই চিনে নিতে পারবে।

এখন আপনার বিড়ালটি একচেটিয়াভাবে মানুষের খাবার খেতে খুব পছন্দ করে, তবে আপনার বিড়ালটিকে আপনি মানুষের ভালো খাবারের সাথে বিড়ালের খাবার মিশিয়ে কয়েক সপ্তাহ খাওয়াতে পারেন। তবে ধারে ধীরে তাকে আগের রুটিনে নিয়ে যেতে যেন আবার ভুলবেন না। তাই সময়ের সাথে সাথে আপনার পোষা বিড়ালকে শুধুমাত্র বিড়ালের খাবার না খাওয়া পর্যন্ত আপনি চেষ্টা করে যেতে থাকবেন।

তবে অনেক বিশেষজ্ঞ এই কৌশল ব্যবহার করে বছরে অন্তত দুই থেকে চার বার বিভিন্ন ব্র্যান্ডের খাবারের মাধ্যমে আপনার বিড়ালের দৈনন্দিন খাদ্যতালিকার কিছুটা পরিবর্তন করতে পরামর্শ দিয়ে থাকে। তাছাড়া এই প্রক্রিয়াটি আপনার বিড়ালের চঞ্চলতা কমাতে সাহায্য করবে এবং অনেক ক্ষেত্রে খাদ্যের অ্যালার্জি ও অন্ত্রের সমস্যাগুলোর প্রতিরোধেও সাহায্য করবে।

Leave a Comment