সবচেয়ে সাধারণ পোষা বিড়াল কোনটি

সবচেয়ে সাধারণ পোষা বিড়াল কোনটি? যারা বিড়াল পুষে তাদের যে কেউই আপনাকে বলবে যে বিড়াল হলো খুব কিউট, চটপটে, অনেক বেশি মজার ও আনন্দদায়ক একটি প্রাণী। কিন্তু বিড়ালের অনেক প্রজাতির মধ্যেও কিছু জাতের বিড়াল রয়েছে, যেগুলো অনেক বেশি হিংসুটে ও আক্রমণাত্মক হয়। তাই যে বিড়ালটি আপনি বাজার থেকে কিনবেন, সেটি যেন আপনার ও আপনার পরিবারের সকলের জন্য উপযুক্ত হয় সেদিকে বিশেষভাব খেয়াল রাখবেন।

কেননা প্রতিটি বিড়ালেরই নিজস্ব কিছু বৈশিষ্ট্য থাকে। আর আপনি যদি নির্দিষ্ট বৈশিষ্ট্যের কোনো বিড়ার খুঁজে থাকেন, তাহলে কোনো একটিকে কেনার আগে অবশ্যই এর স্বভাব সম্পর্কে আপনার ধারণা থাকতে হবে। নিচে কিছু জনপ্রিয় জাতের বিড়াল সম্পর্কে বর্ণনা করা হলো যেগুলো থেকে আপনি আপনার পছন্দের বিড়ালটি খুঁজে নিতে পারেন।

The Cat Fanciers’ Association নামক একটি প্রতিষ্ঠান বিড়ালের ৪৫টি প্রজননক্ষম প্রজাতির পাশাপাশি কিছু অপ্রজননক্ষম বিড়ালকেও স্বীকৃতি দেয়। নিচে সবচেয়ে জনপ্রিয় ১০টি বিড়াল প্রজাতির কিছু সাধারণ বৈশিষ্ট্য দেয়া হলো:

সবচেয়ে সাধারণ পোষা বিড়াল কোনটি? নিচে সেগুলো দেখুন

১. গৃহপালিত ছোট লোমযুক্ত লম্বা বিড়াল

আপনি জেনে অবাক হবেন যে কানাডা এবং মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সমস্ত বিড়ালের প্রায় ৯৫ শতাংশ বিড়াল হলো গৃহপালিত ছোট লোমযুক্ত লম্বা বিড়াল। এই বিড়ালগুলো সাধারণত বন্য প্রকৃতির হয়ে থাকে এবং এদের গলা লম্বায় অনেকটা শরীরের দৈর্ঘ্যের সমান হয়। তাই যুক্তরাজ্যে এদের অতি আদরের সাথে বলা হয় মগিস।

এই বিড়ালগুলো সব ধরনের পরিবারের জন্য উপযুক্ত হতে পারে কারণ এরা অতি আনন্দদায়ক ও সুন্দর। যদিও এরা একটু উগ্র মেজাজের হয়, তবু এরা সহজে আপনাকে খুশি করতে সক্ষম। তাছাড়া এই বিড়ালটি সহজেই আপনার পরিবারের সবার সাথে মিশে যেতে পারে।

(পড়ুনঃ আপনি যদি একটি বিড়াল রাস্তায় কুড়িয়ে পান, তাহলে তার যত্ন কিভাবে করবেন?)

২. মেইন কুন বিড়াল

বিড়াল প্রজাতির একটি চমৎকার প্রজাতি হলো মেইন কুন বিড়াল। মেইন কুন বিড়ালদের দৈহিক উচ্চতা সর্বোচ্চ ১৬ ইঞ্চি, দৈর্ঘ্য ১০০ সেমি (৪০ ইঞ্চি) এবং ওজন ৩.৬-৮.২ কেজি (৭-১৮ পাউন্ড) বা তার বেশিও হয়। এদের কান ও পায়ের নিচের পশম সুন্দর নকশার মতো দেখেতে, চোখা মুখ এবং একটি বড় তুলতুলে লেজ আছে। এরা বন্ধুত্বপূর্ণ স্বভাবের এবং এরা বিভিন্ন জলবায়ুতে খাপ খাইয়ে বেঁচে থাকতে পারে।

তাছাড়া এদের অন্যান্য জাতের বিড়ালদের মতো তেমন যত্ন ও মনোযোগ দেয়ার প্রয়োজন পড়ে না। তবে যেকোনো মেইন কুন বিড়ালই তার মণিবের মনোযোগ চায়, ভালোবাসা চায়, প্রশংসিত হতে চায়।

সবচেয়ে সাধারণ পোষা বিড়াল কোনটি ? পড়ুন আমাদের এই পুরো আর্টিকেলটি।

৩. পার্সিয়ান বিড়াল

ফরাসি বিড়ালদের মুখ গোলাকার, চোখ বড়ো ও গোল গোল এবং নাক চ্যাপ্টা হয়। যা এদেরকে অনেক চমৎকার করে তোলে। তাছাড়া নরম ও মিষ্টি স্বভাবের ফরাসি বিড়ালগুলো যে কেউই পছন্দ করে থাকে। যদিও এই বিড়ালরা এদের মণিব, শিশু কিংবা অন্যান্য পোষা প্রাণীর প্রতি অনেকটাই স্নেহশীল হয়, তবু এরা সাধারণত খুব বেশি প্রাণবন্ত নয়। কেননা এরা খুব শান্ত পরিবেশ পছন্দ করে। প্রাপ্তবয়স্ক ফরাসি বিড়ালদের গড় ওজন ৩-৬ কেজি (৭-১২ পাউন্ড) এর মধ্যে হয়ে থাকে।

৪. ব্রিটিশ ও আমেরিকান ছোট লোমযুক্ত বিড়াল

যারা নিয়ম মাফিক জীবনযাপন পছন্দ করে তাদের জন্য উপযুক্ত হতে পারে ব্রিটিশ ও আমেরিকান ছোট লোমযুক্ত বিড়াল। এরা আকারে খুব বড় বা খুব ছোট নয়, তবে খুব আনন্দদায়ক ও বিনয়ী হয়ে থাকে। ব্রিটিশ প্রজাতির বিড়ালরা আমেরিকান বিড়ালদের থেকে ওজনে একটু বেশি হয়। এদের ওজন ৪-৮ কেজি [৯-১৮ lbs])। এই বিড়ালদের একটি বৈশিষ্ট্য হলো এরা জানে কখন তাদের মণিবদের কিছু ভালবাসা দিতে হবে। তাই এরা এদের মণিব ও পরিবারের সকলের প্রতি বন্ধুত্বপূর্ণ আচরণ করে থাকে। অন্যান্য ছোট লোমযুক্ত বিড়ালের থেকে এদের কম সাজসজ্জার প্রয়োজন হয় এবং পোষ মানাতে কম সময় লাগে।

(পড়ুনঃ আপনার বিড়ালের বয়স কত, কিভাবে জানবেন? )

৫. সিয়াম বিড়াল

এই বিড়ালগুলো দেখতে লম্বা ও সরু হয়। আর এদের মুখ গোলাকার বা অনেকটা আপেল আকৃতির হয়ে থাকে। এদের কান, নাক, পাঞ্জা ও লেজ অনেকটা ক্রিম রঙের শরীরের সাথে দারুন মানায়। তাছাড়া এদের শরীরের ছোট ছোট চুলে চিরুনি ও তেমন যত্নের প্রয়োজন হয় না, যা কোনো একটি লম্বা লোমবিশিষ্ট বিড়ালের ক্ষেত্রে প্রয়োজন হয়। এরা অনেক বেশি আনন্দদায়ক ও উদ্যম স্বভাবের হয় এবং এদের ওজন ৩.৫-৫.৫ কেজি (৭-১২ পাউন্ড) এর মধ্যে হয়ে থাকে।

৬. ডেভন রেক্স বিড়াল

আপনি যদি পরীর মতো দেখতে কোনো বিড়াল খুঁজে থাকেন, তাহলে আপনি ডেভন রেক্স বিড়াল কিনে আনতে পারেন। ডেভন রেক্স বিড়ালদের কান একটু বড়ো তবে এদের চোখ অনেক উজ্জ্বল ও চকচকে। এরা অন্যান্য প্রজাতির মতোই আনন্দদায়ক ও একটু দুষ্টু; কিন্তু এরা আপনাকে খুশি করতে অনেক পারদর্শী। এরা প্রতিটি মুহূর্তে এদের মণিবদের সাহায্য করতে আগ্রহ প্রকাশ করে। তবে জলবিায়ু পরিবর্তনের কারণে শুধুমাত্র ডেভন রেক্স বিড়ালদের মধ্যে শারীরিক কিছু পরিবর্তন দেখা যায় যা এদের শরীরের রংয়ের তারতম্য সৃষ্টি করে।ডেভন রেক্স বিড়ালগুলো ওজনে প্রায় ২.৩-৪.৫ কেজি (৫-১০ পাউন্ড) হয়ে থাকে।

৭. আবিসিনিয়ান বিড়াল

আবিসিনিয়ান বিড়ালগুলো ডোরাকাটা সুন্দর পেশীবহুল শরীরের জন্য পরিচিত। এগুলো একটু মাঝারি আকারের বিড়াল এবং প্রাপ্তবয়স্ক অবস্থায় এদের ওজন ২.৭-৪.৫ কেজি (৬-১০ পাউন্ড) হয়ে থাকে। যদিও এদেরকে কেউ কেউ কাডলার বিড়াল হিসেবে জানে, তবে এরা আবিসিনিয়ান বিড়াল নামেই সর্বধিক পরিচিত। এরা সাধারণত আপনার বাসার ভিতরে কোথায় কী লুকিয়ে আছে তা খুঁজে বের করতে অনেক বেশি পছন্দ করে। তাছাড়া এরা সামাজিক প্রাণী যা আপনার পরিবারের জন্য ভালো হতে পারে।

৮. স্কটিশ ভাঁজযুক্ত বিড়াল

স্কটিশ ভাঁজযুক্ত বিড়ালটির নামকরণ করা হয়েছে এদের বিশেষ ভাঁজযুক্ত কানের জন্য এবং এরা স্কটল্যান্ডে বেশি পাওয়া যায়। যদিও এদের কান ভাঁজযুক্ত, তবু এদের শ্রবণশক্তি যে কোনও বিড়ালের মতোই তীব্র এবং এরা যেকোনো দিকে কান নড়াচড়া করতে পারে শুয়ে থাকা অবস্থাতেও। প্রাপ্তবয়স্ক স্কটিশ ভাঁজযুক্ত বিড়ালদের শরীর অনেক সুঠাম হয় এবং ওজন প্রায় ৩.৫-৫.৫ কেজি (৮-১২ পাউন্ড) হয়ে থাকে। এরা অনেক ভদ্র ও শান্ত স্বভাবের: তবে অনেক বুদ্ধিমান। স্কটিশ ভাঁজযুক্ত বিড়ালগুলো যেকোনো নতুন মণিব এবং যেকোনো জলবায়ু ও বাসস্থানের সাথে ভালভাবে মানিয়ে নিতে পারে। তাই আপনার পরিবারের জন্য স্কটিশ ভাঁজযুক্ত বিড়াল উপযুক্ত হতে পারে।

৯. স্ফিনক্স বিড়াল

স্ফিনক্স বিড়াল একটি অনন্য জাতের বিড়াল যা অনেকেই কিনে থাকে। স্ফিনক্স বিড়ালরা লোমহীন বিড়াল নামেও বেশ পরিচিত। একটি স্ফিনক্স বিড়ালকে পোষা মানানো জলের মতো সোজা। এরা অনেক আনন্দদায়ক, প্রেমময় ও সবার কাছেই অনুগত। তাই এরা অন্যান্য যেকোনা পোষা প্রাণীর থেকে অনেক বেশি পছন্দের। স্ফিনক্স বিড়ালদের ওজন তুলনামূলকভাবে একটু কম। এদের ওজন এই ২.৭-৫.৫ কেজি (৬-১২ পাউন্ড) এর মধ্যে হয়ে থাকে। এরা সহজেই আপনাকে ধরে রাখতে দিতে চায়। যেহেতু এদের গায়ের পশম সত্যিকার অর্থে নেই, তাই এরা দেখতে অনেক বেশি সুন্দর হয়। তবে এদের প্রতি সপ্তাহে গোসল করানোর পাশাপাশি নিয়মিত এদের কান ও নখের যত্ন নেয়ার প্রয়োজন হতে পারে।

১০. দেশি বিড়াল

দেশি বিড়ালরা বর্তমানে খুব জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে কারণ এই জাতের বিড়ালরা দেখতে ক্ষুদ্রাকৃতির (৩.৬-৭ কেজি) চিতাবাঘের মতো। তবে এরা একটু আবিসিনিয়ান বিড়ালদের মতো হলেও এরা তাদের তুলনায় অত্যন্ত কৌতূহলী ও অনুসন্ধানী। এরা সব সময় কিছু না কিছু নিয়ে ব্যস্ত থাকার জন্য এদের দিকে অনেক বেশি মনোযোগী হতে হয়।তা না হলে এরা বিরক্ত বা হতাশ হয়ে পরে যা এদের অনাকাঙ্খিত আচরণের দিকে নিয়ে যেতে পারে। তবে এরা এমন একটি বিড়ালের জাত যারা জল খেতে পছন্দ করে এবং আপনার বাড়িতে যদি অ্যাকোয়ারিয়ামে মাছ থাকে তাহলে সে মাছগুলো ধরতে যাওয়ারও সিদ্ধান্ত নিতে পারে। তারা অনেক বাড়ির জন্য এই বিড়ালগুলো উপযুক্ত নয়।

যদিও উপরিউক্ত এই আলোচনায় বিড়ালের প্রতিটি প্রজাতির একটি সংক্ষিপ্ত বিবরণ দেয়া হয়েছে, তবে এটি মনে রাখা গুরুত্বপূর্ণ যে প্রতিটি বিড়ালই অনন্য ও বিশেষ বৈশিষ্ট্যসম্পন্ন যা অনেকের জন্য উপযুক্ত নাও হতে পারে। তবে কোনো একটি বিড়ালের সাথে সময় কাটানোর মাধ্যমে আপনি এর সম্পর্কে আরো বেশি জানতে পারবেন। আসা করি আমাদের এই আর্টিকেল থেকে আপনি জানতে পেরেছেনঃ সবচেয়ে সাধারণ পোষা বিড়াল কোনটি।

Leave a Comment