গরম পানি বা আগুনে বিড়াল পুড়ে গেলে কি করবেন?

আমরা সাধারনত অনেক গরম কিছুতে স্পর্শ করলে বা আগুনে কোনক্রমে হাত গেলে হাত পুড়িয়ে ফেলি। গরম কিছুতে স্পর্শ লাগলে বিড়ালের শরীরে ফোস্কাও পড়তে পারে। এছাড়াও কেমিক্যাল বা ইলেক্ট্রিকাল কিছুর দ্বারাও বিড়াল নিজেকে পুড়িয়ে আহত করতে পারে। গরম পানি বা আগুনে বিড়াল পুড়ে গেলে কি করবেন?

পুরে যাওয়া বিড়াল শকে যেতে পারে বা নিঃশ্বাস গ্রহনে সমস্যা অনুভব করতে পারে। তবে পুড়ে গেলেও বিড়ালকে ট্রিটমেন্ট করে সুস্থ করে তোলা যায়। কিন্তু বেশী পুড়ে যাওয়া বিড়ালের ট্রিটমেন্ট কিছুটা জটিল প্রকৃতির। 

গরম পানি বা আগুনে বিড়াল পুড়ে গেলে কি করবেন
গরম পানি বা আগুনে বিড়াল পুড়ে গেলে কি করবেন

সতর্ক থাকুনঃ

বিড়ালরা সাধারনত গরম কোন কিছুর সংস্পর্শে এলে যেমন গরম রান্নার পাতিল বা কেমিক্যাল যুক্ত কোন কিছু যা দাহ্য ইত্যাদি দ্বারা সংস্পর্শে এলে দুর্ঘটনা ঘটিয়ে ফেলতে পারে। এছাড়াও তাদের পিঠে গরম কিছু পড়ে যেয়েও দুর্ঘটনা ঘটতে পারে। আর বিড়ালের গলা, নাক, কান সাদা হলে সান বার্ন হতে পারে। 

বিড়ালের বার্নিং স্কিন ড্যামেজের উপর ভিত্তি করে কয়েক ধাপে ভাগ করা যেতে পারেঃ

১। এক ডিগ্রি বার্নঃ প্রথম ডিগ্রি বার্নে স্কিন লালচে হয়ে যায়। কিন্ত ভেতরের স্কিন লেয়ার গুলি একদম ঠিক থাকে। কিছু লোম পুরে যেতে পারে। হালকা কিছুটা অস্বস্তি বা ব্যাথা অনুভব করতে পারে আপনার বিড়ালটি। 

২। দু ডিগ্রি বার্নঃ অতিরিক্ত লালচে বা ব্লিস্টার ধাচের হলে দুই ডিগ্রি বার্ন বলা যেতে পারে। স্কিনের কয়েক লেয়ার পর্যন্ত ড্যামেজ হতে পারে এতে। বিড়াল এরকম ক্ষেত্রে বেশ ব্যাথা অনুভব করবে। 

৩। তিন ডিগ্রি বার্নঃ তিন ডিগ্রি বার্নে বিড়ালের টিস্যুসহ স্কিন বেশ ভালোভাবেই ক্ষতিগ্রস্ত হয়। গায়ের লোম ও চামড়া পুড়ে কালো হতে পারে। 

দুই ও তিন ডিগ্রি বার্নের ক্ষেত্রে বিড়াল শক, ইনফেকশন বা ডিহাইড্রেশনে যেতে পারে। যদি কেমিক্যাল দ্বারা বিড়ালের দুর্ঘটনা ঘটে থাকে তবে অবস্থা আরো জটিল হতে পারে। কেননা বিড়াল আক্রান্ত জায়গা লিকিং করে কেমিক্যাল খেয়ে নিতে পারে।

এতে করে বিড়ালের অবস্থা আরো সংকটাম্পন্ন হতে পারে। আর আগুনের দ্বারা বিড়ালের দুর্ঘটনা ঘটলে নিঃশ্বাস তন্ত্রে সমস্যা দেখা দেয়। গরম পানি বা আগুনে বিড়াল পুড়ে গেলে কি করবেন?

আগুনে পুড়ে যাওয়ার প্রাথমিক ও প্রধান কারনঃ 

বেশিরভাগ ক্ষেত্রে বিড়ালের উপর গরম কিছু পড়ে যেয়ে বা তারা ছুটাছুটি করে গরম কিছুর সংস্পর্শে এসেই দুর্ঘটনা ঘটাতে পারে। এছাড়াও ক্ষেত্র বিশেষে কেমিক্যাল দ্বারাও দুর্ঘটনা ঘটতে পারে। 

গর্ভবতী বা প্রেগনেন্ট বিড়ালের যত্ন কীভাবে নিবেন? Pregnant Cat Care

ইমিডিয়েট কেয়ারঃ

দুর্ঘটনা ঘটলে প্রাথমিক ও দ্রুত চিকিৎসা দিয়ে আপনি ড্যামেজ অনেকটাই নিয়ন্ত্রনে আনতে পারবেন। তবে অবশ্যই সাবধানতার সাথে ট্রিটমেন্ট করাবেন। শুরুতেই টাওয়েল দিয়ে আক্রান্ত বিড়ালকে পেচিয়ে এর দাহ্য বা দুর্ঘটনা প্রশমিত করতে পারেন। 

গরম পানি বা আগুনে বিড়াল পুড়ে গেলে কি করবেন? থার্মাল বার্নের ক্ষেত্রেঃ 

  • এক ও দুই ডিগ্রি বার্নে প্রচুর পরিমাণে ঠান্ডা পানি আক্রান্ত স্থানে ঢালতে থাকুন। প্রায় ২০ মিনিট একটানা পানি ঢালুন। আক্রান্ত স্থান ভেজা টাওয়াল দিয়ে পেচিয়ে ধীরে সুস্থে পানি ঢালুন। যতটা সম্ভব ঠান্ডা পাই ঢালতে থাকুন। পানি কখনো স্প্রে করবেন না। কেননা বিড়াল স্প্রে করা পানি শরীরে পছন্দ করে না।
  • এক ডিগ্রি বার্নে আক্রান্ত স্থান ও আশে পাশে প্রচুর হিট অনুভব করে বিড়াল। তাই শুকনো টাওয়াল পানিতে ভিজিয়ে আক্রান্ত স্থান মুছে দিন। এতে করে উত্তাপ শুষে বের হয়ে যায় শরীর থেকে। তবে বেশী ঘষা মাজা করবেন না আক্রান্ত স্থানে। এলোভেরা লাগাতে পারেন আক্রান্ত স্থানে। বাটার কংবা ওয়েন্টমেন্ট লাগাবেন না কোনভাবেই। এতে করে আক্রান্ত স্থান আরো অনেক পুড়ে যাবে। 
  • দুই ডিগ্রি বার্নে বিড়ালকে ভেটের কাছে নিয়ে চলুন। প্রাথমিক চিকিৎসার পর ভেজা টাওয়াল রেখে বিড়ালকে ভেটের কাছে নিয়ে চলুন। 
  • তিন ডিগ্রি বার্নে বিড়াল শকে চলে যায়। সবচেয়ে ড্যামেজ অংশে ভেজা টাওয়ার দিয়ে পেচিয়ে এর উপরে আরেকটি শুকনো টাওয়াল পেচিয়ে দিন। যত দ্রুত সম্ভব ভেটের কাছে নিয়ে যান। 

বিড়ালের জন্য শীতে বাড়তি যত্ন নেয়া প্রয়োজন। আর তাই প্রতিনয়ত বিড়ালের শিতে যত্ন সম্পর্কে জানতে আমাদের আর্টিকেল পড়ুন।

কেমিক্যাল বার্নের ক্ষেত্রে বিড়ালের চিকিৎসাঃ

  • গ্লোভ, গগলস ও সেফটি গিয়ার দ্বারা নিজের হাত ও নিজেকে সুরক্ষিত করে নিন।
  • প্রচুর পানি ঢালুন যাতে কেমিক্যাল ধুয়ে চলে যায়। কেমিক্যাল তৈলাক্ত হলে এক বা দুই ডিগ্রি বার্নে অল্প কিছুটা ডিস লিকুইড নিয়ে ব্যবহার করতে পারে। তবে লিকুইড বা সাবান যেন ভালোভাবে পরিষ্কার হয় সেই ব্যাপারে খেয়াল রাখবেন। যেহেতু বিড়াল স্প্রে করা পানি পছন্দ করে না তাই বালতিতে করে পানি ঢালুন বিড়ালের শরীরে। একটু পর পরই পানি পরিবর্তন করুন। অথবা খালি বাকেটে বিড়ালকে রেখে আস্তে আস্তে পানি ঢালুন। 
  • তিন ডিগ্রি বার্নে ভেজা টাওয়াল দিয়ে পেচিয়ে রাখুন বিড়ালকে। যতটা সম্ভব কেমিক্যাল ধুয়ে পরিষ্কার করে ফেলুন। 
  • কেমিক্যাল পরিষ্কার হলে আক্রান্ত স্থান ফ্রেশ, ধোয়া ও শুকনো টাওয়াল দিয়ে পেচিয়ে ভেটের কাছে নিয়ে চলুন। 
  • যে কেমিক্যাল দ্বারা দুর্ঘটনা ঘটেছে সেই কেমিক্যাল নিয়ে ভেটের কাছে নিয়ে চলুন। কেমিক্যালের প্রকৃতি বুঝে ভেট বিড়ালের ট্রিটমেন্ট শুরু করবেন। 

গরমে বিড়ালের যত্ন সম্পর্কে জানতে হবে পড়ুন।

ভেটেরনারী কেয়ারঃ

ডায়াগনসিসঃ

পর্যাপ্ত উপাত্ত ও এক্সাম দ্বারা নিশ্চিত হয়ে ভেট বিড়ালের ডায়াগনসিস করা শুরু করবেন। স্মোক ইনহেলেশন ও কেমিক্যাল ইনজেশন হলে আরো অতিরিক্ত কিছু পরীক্ষার প্রয়োজন হতে পারে। 

সদ্য জন্ম নেয়া বিড়ালছানার সঠিক যত্ন নিন Newborn Kitten Care

Cat Burn ট্রিটমেন্টঃ

বার্নড এরিয়া শেইভড ও পরিষ্কার করুন। যদি অন্য সমস্যা দেখতে পান যেমন কেমিক্যাজ ইনজেশন, ইনহেলেশন শক ইত্যাদি হলে দ্রুত ভেটের কাছে নিয়ে যেয়ে ট্রিটমেন্ট করান। ভেট বিড়ালের অবস্থা বুঝে ট্রিটমেন্ট শুরু করবেন। কিছু ট্রিটমেন্ট মেজার হচ্ছেঃ

১। এক ডিগ্রি বার্নের ক্ষেত্রে বাসাতেই বিড়ালের চিকিৎসা করাতে পারবেন। প্রয়োজনে একবার ভেটের কাছে চাইলে নিয়ে যেতে পারেন। 

২। দুই ডিগ্রি বার্নের ক্ষেত্রে ব্যান্ডেজের প্রয়োজন হতে পারে। এন্টি বায়োটিক এবং পেইনকিলার প্রেসক্রাইব করা হতে পারে। ব্যান্ডেজ হলে নির্দিষ্ট সময় পর পর পরিবর্তন করাতে হতে পারে। এতে বেশ তাড়াতাড়ি বিড়াল সুস্থ হয়ে উঠে। 

৩। তিন ডিগ্রি বার্নের ক্ষেত্রে বিড়ালকে হসপিটালে এডমিট করাতে হয়। শক ও ব্যাথা কমাতে আইভি ফ্লুইড ব্যবহারের প্রয়োজন হতে পারে। এন্টোবায়োটিক এবং পেইনকিলার পাশাপাশি চালিয়ে যেতে হয়। বার্নড এরিয়া ব্যান্ডেজ করে রাখা হয় যাতে স্কিন ইনফেকশন না হয় এবং দ্রুত ভালো হওয়া শুরু করে। প্রথম দিকে ব্যান্ডেজ নিয়মিত প্রতিদিনই পরিবর্তন করিয়ে দিতে হয়। এছাড়াও পরিষ্কার করাতে হয়। বেশ কিছুদিন বিড়াল হসপিটালে থাকতে হতে পারে। একটু সুস্থ হওয়া শুরু করলে আপনি বাসায় নিয়ে এসে বিড়ালের যত্ন নিতে পারবেন। 

অন্যান্য কিছু বিষয়ঃ

বিড়ালের ইলেক্ট্রিকাল বার্ন বা সান বার্ন হতে পারে। সেগুলির ট্রিটমেন্টও একিই ধরনের। অর্থাৎ থার্মাল বার্নে যে ট্রিটমেন্ট এসব ক্ষেত্রেও একিই ধরনের ট্রিট্মেন্ট। 

লিভিং এবং ম্যানেজমেন্টঃ

কিছু ক্ষেত্রে বিড়াল পুড়ে গেলেও এর লক্ষণ বুঝতে সময় লাগতে পারে। বার্নড হলে যদি বিড়ালকে হসপিটালে ভর্তি না করেন তবে বাসায় বসে সতর্কতার সাথে মনিটর করুন। ঠিকভাবে যদি খেয়াল না করেন তবে আপনার অজান্তেই অন্যান্য রোগ ব্যাধি আপয়ান্র বিড়ালকে আক্রান্ত করতে পারে। 

বাসায় যত্ন নিলে অবশ্যই ব্যান্ডেজ ঠিকভাবে চেইঞ্জ করবেন। তাদের পরিষ্কার ও শুকনো রাখা খুবই গুরুত্বপুর্ন। আক্রান্ত স্থান লিকিং করতে দিবেন না। এলিজাবেথ কলার প্রয়োজনে ব্যবহার করতে পারেন। শিডিউল অনুযায়ী ব্যান্ডেজ পরিবর্তন করে দিন। ব্যান্ডেজ করার পরেও যদি অবস্থা খারাপ দেখতে পান তবে ভেটের কাছে নিয়ে চলুন। প্রথমদিকে ভেটের কাছে থেকেই ব্যান্ডেজ পরিবর্তন করান। 

তিন ডিগ্রি বার্নের ক্ষেত্রে কয়েক মাস সময়ের প্রয়োজন হতে পারে পুরোপুরি সুস্থ হতে। এই সময়ে পরিপূর্নভাবে ভেটের গাইডলাইন অনুসরণ করুন। এটি একটু জটিল প্রক্রিয়া। তাই তুলনামূলক কিছুটা সময়ের প্রয়োজন হয় পুরো সুস্থ হতে। এছাড়াও অন্যান্য কিছু সাইড ইফেক্টস দেখা দিতে পারে। কিন্তু একবার টিস্যু ঠিক হওয়া শুরু করলে তেমন কোন সমস্যা দেখা দেয় না। 

বাড়ির বাইরে ও ভেতরে বিড়ালকে নিয়ে খুবই সতর্ক থাকুন। দুর্ঘটনা যেন না ঘটে সেই ব্যাপারে যথাযথ ব্যবস্থা নিন। 

1 thought on “গরম পানি বা আগুনে বিড়াল পুড়ে গেলে কি করবেন?”

Leave a Comment