বিড়ালের কৃমি হলে করনীয়

বিড়ালের কৃমি হলে করনীয় কি? বিড়ালের অন্ত্রে কৃমি হওয়া খুবই সাধারণ একটি ব্যাপার। যেটা অবশ্যই আমাদের জন্য খুবই চিন্তনীয় একটি বিষয়। তবে আমাদের চিন্তার কোনো কারণ নেই যেহুতু বিড়ালের অন্ত্রে কৃমির চিকিৎসা করা তুলনামূলকভাবে অনেক সহজ। য়দিও কিছু কিছু বিড়ালের ক্ষেত্রে অন্ত্রে কৃমি হলে ভয়াবহ সমস্যার সৃষ্টি হয়, তবে বেশিরভাগ বিড়ালই চিকিৎসার মাধ্যমে সম্পূর্ণ সুস্থ হয়ে ওঠে।

কিন্তু আমাদের উচিত বিড়ালের অন্ত্রে যেন কৃমি না হতে পারে সে জন্য যথাযথভাবে বিড়ালের অন্ত্রে প্রতিরোধ ব্যবস্থা গড়ে তোলা। আর এজন্য এই পরজীবী থেকে আপনার বিড়াল বা বিড়ালছানাকে রক্ষা করতে আপনি নিম্নোক্ত সহজ কিছু পদক্ষেপ গ্রহণ করতে পারেন।

অন্ত্রের কোন কৃমি বিড়ালদের সংক্রমিত করে?

নিউটার কানসাস শহরের অন্যতম প্রধান পশু চিকিৎসক, জেসিকা নিকোলস (ডিভিএম) এর মতে, বিভিন্ন ধরণের অন্ত্রের কৃমি রয়েছে যেগুলো বিড়ালদের সংক্রামিত করে থাকে। আর এই কৃমিগুলোর প্রত্যেকটির নিজস্ব বৈশিষ্ট্য রয়েছে, যাদের সংক্রমণের মাত্রা একেকটির একেক রকম। এখানে নিচে কিছু কৃমির বিবরণ দেয়া হলো যেগুলো সাধারণত বেশিরভাগ বিড়ালদের মধ্যেই দেখা যায়:

গোলকৃমি

গোলকৃমি (যাকে অ্যাসকারিডও বলা হয়) অনেকটা লম্বা আকারের ও বাদামী রঙয়ের এক ধরণের গোলাকার পরজীবী। এটি দেখতে রান্না করা সেমাইয়ের মতো। জেসিকা নিকোলস(ডিভিএম) এর মতে, বিড়াল ছানাদের অন্ত্রে সাধারণত সবচেয়ে বেশি যেই কৃমিটি দেখা যায় সেটি হলো গোলকৃমি। আর প্রাপ্তবয়স্কদের তুলনায় বিড়াল ছানাদেরই প্রায়শই সংক্রামিত করে।

ফিতাকৃমি

ফিতাকিৃমি দেখতে লম্বা, সাদা ও চ্যাপ্টা। এদের মুখের সামনে হুকের মতো রয়েছে খণ্ডিত অংশ রয়েছে যেগুলো দিয়ে এরা যা বিড়ালের অন্ত্রের প্রাচীরে নিজেদেরকে সংযুক্ত করতে ব্যবহার করে। প্রাপ্তবয়স্ক ফিতাকৃমির লম্বা ফিতাগুলো (যেগুলোকে প্রোগ্লোটিডও বলা হয়) সংক্রামিত বিড়ালের মলত্যাগ পর্যন্ত বির্স্তৃত হয়।

জেসিকা নিকোলস(ডিভিএম) এর মতে, এই প্রোগ্লোটিডগুলি বা ফিতাকৃমির লম্বা ফিতাগুলোগুলো ধানের দানার মতো, যেগুলো প্রায়ই সংক্রামিত বিড়ালের মলদ্বারের প্রান্তের আশেপাশে নড়াচড়া করে থাকে।

বক্রকৃমি

নিকোলস এর মতে, বিড়াল ছানাদের মধ্যে বক্রকৃমি ফিতাকৃমি ও গোলকৃমির তুলনায় অনেক মধ্যে কম দেখা যায়। যেটি অবশ্য একটি ভালো লক্ষণ কেননা এই বক্রকৃমি বিশেষত একটি ভয়াবহ পরজীবী। বক্রকৃমি হলো অন্ত্রে বসবাসকারী রক্ত-ভোজী ধরনের গোলাকার কৃমি যা হেলমিনথিয়াস নামক বিভিন্ন ধরনের সংক্রমণের সৃষ্টি করে থাকে।

তাছাড়া নিকোলস এর মতে, “এরা বিড়াল ছানাদের অন্ত্রের চারপাশে ভাসমান খাদ্য এবং পানীয় সামগ্রী খেয়ে থাকে। কিন্তু এরা এমন এক পরজীবী যারা অন্যান্য কৃমিগুলির বিপরীতে এদের দাঁতগুলি বিড়ালের অন্ত্রে আটকে রক্ত চুষে খায়।”

এদিকে আপনার বিড়াল যদি অনেক বেশি হাঁচি দেয়, তাহলে আমাদের আর্টিকেলটি ঠিক আপনার জন্য। দেখে নি এই সম্পর্কে বিস্তারিত।

চাবুক কৃমি

চাবুককৃমি সাধারণত বিড়ালের অন্ত্রকে সংক্রামিত করতে পারে। তবে প্রাণী পরজীবী অধিদপ্তরের মতে, উত্তর আমেরিকায় বিড়াল ছানাদের চাবুককৃমি সংক্রমণের হার খুবই কম। কিন্তু গ্রীষ্মমন্ডলীয় অঞ্চলে চাবুককৃমির সংক্রমণের হার অনেক বেশি দেখা যায়।

আপনি হয়তো ভাবতে পারেন এগুলোর বাইরেও অন্য এক ধরনের পরজীবী রয়েছে যা বিড়ালকে সংক্রমিত করতে পারে, তার নাম হলো হৃদকৃমি। উপরে যেই কৃমিগুলোর ব্যাখ্যা করলাম এগুলো সবই মূলত বিড়ালের অন্ত্রে বাস করে, কিন্তু এদের বিপরীতে হৃদকৃমি বিড়ালের হৃদপিণ্ড এবং ফুসফুস বাস করে বিড়ালের হৃদপিণ্ড এবং ফুসফুসকে সংক্রামিত করে, যার ফলে বিড়ালের হৃদরোগ হয়। তাই হৃদকৃমি প্রতিরোধ খুবই গুরুত্বপূর্ণ যেহুতু এর কারণে বিড়ালদের মধ্যে রোগ মারাত্মক হতে পারে।

এছাড়া আপনি যদি বিড়ালের পটি ট্রেনিং নিয়ে চিন্তিত থাকেন তাহলে আমাদের পটি ট্রেনিং সম্পৃক্ত আর্টিকেলটি দেখতে পারেন।

কিভাবে বিড়ালেরা কৃমি দ্বারা সংক্রমিত হয়?

বিড়াল ছানারা কৃমি দ্বারা সংক্রমিত বিভিন্ন উৎস থেকে হয়। বিশেষত এরা ইঁদুর, মাছি এবং প্রাথমিকভাবে এদের কৃমি দ্বারা সংক্রমিত মায়ের দুধ খেয়ে সংক্রমি হয়।

গোলকৃমি: বিড়ালছানারা প্রায়শই সংক্রমিত মায়ের দুধের মাধ্যমে গোলকৃমি পায়। তবে প্রাপ্তবয়স্ক বিড়াল এবং বিড়ালছানা উভয়ই গোলকৃমি দ্বারা সংক্রামিত কুকুর অথবা বিড়ালের মলে থাকা গোলকৃমির ডিম খেয়ে কিংবা সংক্রমিত ইঁদুর বা অন্যান্য ছোট প্রাণীর মাংস খাওয়ার মাধ্যমেও সংক্রামিত হতে পারে।

ফিতাকৃমি: নিকোলসের মতে, ফিতাকৃমির লম্বা ফিতা বা প্রোগ্লোটিড দ্বারা বাহিত ডিম খেয়ে বিড়ালরা সংক্রমিত হয় না। এরা ফিতাকৃমি দ্বারা সংক্রমিত মাছি কিংবা অন্যান্য সংক্রমিত ছোট প্রাণী যেমন- ইঁদুর, কাঠবিড়ালি এবং খরগোশ খেয়ে ফিতাকৃমি দ্বারা সংক্রমিত হয়ে থাকে।

বক্রকৃমি: নিকোলস এর মতে, বক্রকৃমিরা সাধারণত এদের ডিমগুলি একটি সংক্রমিত প্রাণীর মলের মাধ্যমে ছেড়ে দেয়, যা পরবর্তীতে মাটিতে বসবাসকারী বক্রকৃমির বাচ্চাদের মধ্যে ফুটে ওঠে। বিড়ালছানারা তারপরে মাটি থেকে বাচ্চা বক্রকৃমি খেয়ে অথবা সংক্রমিত ইঁদুর, পাখি কিংবা তেলাপোকা খেয়ে সংক্রামিত হয়। আর বাচ্চা বক্রকৃমিগুলো বিড়ালদের ত্বকের মধ্যে দিয়ে অন্ত্রে ভ্রমণ করে সংক্রমিত করতে সক্ষম হয়

এদিকে আপনার বিড়াল যদি ঠান্ডায় আক্রান্ত হয়ে তাহলে এটা খুব সাধারণ ভাবে নেয়া যাবে না। বিড়ালের ফ্লু রিলেটেড আমাদের আর্টিকেলটি আপনি অবশ্যই দেখে নিন।

কিভাবে আপনি নিশ্চিত হবেন আপনার বিড়াল কৃমি দ্বারা সংক্রমিত?

বিড়ালদের মধ্যে কৃমির লক্ষণ কিংবা উপসর্গ পরজীবী দ্বারা সংক্রমণের মাত্রার ওপর নির্ভর করে। অর্থাৎ বিড়ালের মধ্যে কতগুলি কৃমি রয়েছে তার উপর নির্ভর করে। তবে প্রায়শই অন্ত্রের কৃমিযুক্ত বিড়ালের মধ্যে তেমন একটা উপসর্গ দেখা যায় না।

গোলকৃমি:

বিড়ালদের মধ্যে গোলকৃমি সংক্রমণের কিছু সাধারণ লক্ষণগুলির মধ্যে রয়েছে- ডায়রিয়া, ওজন হ্রাস, দুরর্বল ভাব, চুলের রঙ ধূসর হওয়া, বিকাশে ব্যাহত হওয়া (অর্থাৎ বিড়াল ছানাগুলি যেমন বৃদ্ধি হওয়া উচিত তেমন বাড়ে না) এবং মাঝে মাঝে বমি করা।

নিকোলস এর মতে, “বিড়ালছানা গোলকৃমি দ্বারা সংক্রমিত হলে প্রায়শই বিড়াল ছানার পেট ফাপা থাকে এবং যে বিড়াল ছানাগুলি বেশি সংক্রামিত, এদের মাঝে মাঝে মলত্যাগে কিংবা বমিতে মৃত গোলকৃমি থাকে।

আর গোলকৃমি সংক্রমণের ফলে অনেক বিড়াল রক্ত স্বল্পতায় ভুগতে পারে (অর্থাৎ তাদের শরীরের প্রয়োজনীয় অক্সিজেন বহন করার জন্য যথেষ্ট পরিমাণে লোহিত রক্তকণিকা থাকে না)। এছাড়া সবচেয়ে চিন্তার বিষয় হলো গোলকৃমি সংক্রমণের উপসর্গ অনেক বিড়াল বিশেষ করে প্রাপ্তবয়স্কদের মধ্যে কোন লক্ষণ দেখা যায় না।

ফিতাকৃমি:

নিকোলস এর মতে, ‘বেশিরভাগ সময়ই ফিতাকৃমি সংক্রমিত বিড়ালদের মধ্যে তেমন কোনও লক্ষণ দেখা যায় না। তবে যারা সচরাচর বিড়াল পুষে থাকে এরা মাঝে মাঝে ফিতাকৃমি সংক্রমিত বিড়ালদের মাঝে সাধারণ যে লক্ষণগুলি অনুধাবন করে তার মধ্যে হল- ফিতাকৃমি সংক্রমিত বিড়ালের মলত্যাগে ও মলত্যাগ শেষে বিড়ালের পিছনের প্রান্তে ফিতাকৃমির ডিমের উপস্থিতি। সাধারণ অবস্থায় বিড়াল ফিতাকৃমি দ্বারা সংক্রমিত হলে বমি, ডায়রিয়ার উপসর্গ দেখা দিতে পারে।’

আপনি যদি বিড়ালের হিটে আসা নিয়ে চিন্তিত থাকেন তাহলে আপনার জন্য আমাদের দুইটি আর্টিকেল রয়েছে। বিড়ালের হিট সম্পৃক্ত এই দুইটি আর্টিকেল আপনার অবশ্যই জরুরী।

বক্রকৃমি:

নিকোলস এর মতে, বিড়াল বক্রকৃমি দ্বারা সংক্রমিত হলে ডায়রিয়ার মতো সাধারণ লক্ষণগুলির বাইরেও মূলত রক্ত চোষা বক্রকৃমিগুলোর দ্বারা বিড়ালের গুরুতর রক্ত স্বল্পতাসহ এমনকি আকস্মিক মৃত্যুর কারণও হতে পারে। আর এদের সংক্রমণের তালিকায় বিড়াল ছানারাই সবচেয়ে বেশি ঝুঁকিতে থাকে। বক্রকৃমিগুলোর আরেকটি বিশেষ বৈশিষ্ট্য হল এরা সাধারণত বিড়ালের পাঞ্জা এবং পেটে যেখানে বিড়ালেরা আহত হলে ক্ষত তৈরি হয়, সে স্থান নিয়ে খুব সহজে সংক্রমিত হতে পারে।

বিড়ালের কৃমি হলে করনীয়

যদিও অন্ত্রের কৃমি বিড়ালদের মধ্যে গুরুতর সমস্যা সৃষ্টি করতে পারে, তবু আপনার বিড়াল কৃমি দ্বারা সংক্রমিত হয়েছে কিনা একবার নির্ণয় করলে খুব সহজেই এদের নির্মূল করা যায়।

আপনার বিড়াল কৃমি দ্বারা সংক্রমিত হয়েছে কিনা কিভাবে নির্ণয় করবেন এবং কিভাবে তার চিকিৎসা করবেন?

  • গোলকৃমি: নিকোলাস এর মতে, ‘বিড়ালের অন্ত্রে গোলকৃমি আছে কিনা তা নির্ণয় করতে প্রায়শই বিড়ালের মল পরীক্ষা করা হয়। আর এর জন্য বিড়ালের মলত্যাগের নমুনায় গোলকৃমির ডিমগুলি সন্ধান করার জন্য একটি মাইক্রোস্কোপ ব্যবহার করা হয়।’ যেহেতু বিড়ালদের কোনো লক্ষণ ছাড়াই গোলকৃমি থাকতে পারে, তাই তিনি বছরে অন্তত একবার বিড়ালের অন্ত্রে কোনো গোলকৃমি আছে কিনা তা জানতে বিড়ালের একটি মল ফ্লোট টেস্ট পরীক্ষা করার পরামর্শ দেন।
  • গোলকৃমি দ্বারা সংক্রামিত বিড়ালদের সাধারণত মুখ দিয়ে কৃমিনাশক ওষুধ দেওয়া হয়, যার ফলে অবিলম্বে বিড়ালের অন্ত্রে অবস্থিত সমস্ত কৃমি মারা যেতে শুরু করবে। তবে বিড়ালকে কতগুলো কৃমিনাশক ওষুধ দেযা হবে সেটা নির্ভর করবে গোলকৃমি দ্বারা সংক্রামণের হারের উপর। বেশি সংখ্যক গোলকৃমি দ্বারা সংক্রামিত বিড়ালদের একাধিক ডোজ দেয়া হয়। যেহেতু বিড়ালছানাগুলোর মাঝে গোলকৃমি দ্বারা সংক্রামণের মাত্রা খুবই সাধারণ, তাই সাধারণ সতর্কতা হিসাবে আপনি গোলকৃমিনাশকে একটি ডোজ আপনার বিড়াল ছানাকে দিতে পারেন।

Leave a Comment