বিড়ালের সাধারন কিছু রোগ Common Cat Diseases

অন্যান্য প্রাণীদের মতোই বিড়াল বিভিন্ন সময়ে বিভিন্ন ধরনের রোগে Common Cat Diseases অসুস্থ হয়ে থাকে। কিছু ধরনের রোগ যেমন hypertrophic cardiomyopathy বা হাইপারট্রোপিক কার্ডিওমাইয়োপেথি বিড়ালের জন্মগতভাবে হয়ে থাকে।

কিন্ত বেশিরভাগ রোগ ভাইরাস, ইনফেকশন বা প্যারাসাইট দ্বারা হয়ে থাকে। স্বস্তির ব্যাপার এই যে, বিড়ালকে যদি ঠিকমত ভ্যাক্সিন দেয়া হয় তবে অনেক প্রাননাশক রোগ থেকে বিড়াল বেচে যেতে পারে।

বিড়ালের সাধারন কিছু রোগ Common Cat Diseases
বিড়ালের সাধারন কিছু রোগ Common Cat Diseases

ঘরের পালিত বিড়াল থেকে বন্য বা রাস্তার বিড়ালগুলি সাধারনত রোগাক্রান্ত বেশী হয়। এর অবশ্য বেশ কিছু কারন রয়েছে। সেগুলি হলঃ

  • বন্য বিড়ালগুলি বাচ্চা প্রসব করে ঘরের বিড়াল থেকে।
  • বন্য বিড়ালগুলির প্যারাসাইট বেশী হয়। যার কারণে তাদের রোগাক্রান্ত হওয়ার পরিমাণ বেশী
  • বন্য বিড়াল ঠিকমত যত্ন ও পুষ্টি পায় না। যার কারণে তার বাচ্চারাও সঠিক পুষ্টি পায় না। 

ভেট থেকে ঠিকমত ভ্যাক্সিন বা মেডিকেশন না নিলে বিড়ালের প্যারাসাইটসহ আরো নানাবিধ রোগে আক্রান্ত হওয়ার সম্ভাবনা অনেক বেড়ে যায়। যেহেতু প্রতিটি বিড়ালই আলাদা তাই প্রতিবার ভ্যাক্সিন বা মেডিকেশন দেয়ার পূর্বেই ভেটের সাথে আলোচনা করে নিন।

এছাড়াও বিড়ালদের মাঝে ছোয়াচে বা এক বিড়াল থেকে অন্য বিড়ালে রোগ সংক্রমনের হার অনেক বেশী। চলুন জেনে নেয়া যাক বিড়ালের কিছু সাধারন রোগ ব্যাধি সম্পর্কে। (cat diseases and symptoms) 

১। প্যানলিউকপেনিয়া/ Panleukopenia (Feline Distemper) 

Panleuk বা প্যানলুয়েক একধরনের ভাইরাল জাতীয় রোগ যা parvovirus গোত্রের। সাধারনত বন্য বা বাইরের বিড়াল কিংবা অনেক বিড়াল নিয়মিত একত্রিত হলে এই রোগট ছড়াতে পারে। বোন ম্যারো কিংবা অন্ত্রের ক্ষতিসাধন হয়ে থাকে এই রোগে। এর লক্ষণ ডিহাইড্রেশন বা সেপসিস। এই রোগে দ্রুত ভেটের কাছে নিয়ে যান। 

২। আপার রেসপিরেওটরি ইনফেকশন/ Upper Respiratory Infections

Upper respiratory infections রোগটি rhinotracheitis যার অন্য নাম feline herpes virus এবং feline calicivirus। এই ভাইরাস গুলি দ্বারা রোগ প্রতিরোধের জন্য ভ্যাক্সিন রয়েছে। এই রোগের লক্ষণ হচ্ছে sneezing বা স্নিজিং বা নাক দিয়ে পানি ঝরা কিংবা পিংক আই হওয়া।

এই জাতীয় আরো একটি রোগ হচ্ছে chlamydia যা ব্যাক্টেরিয়া দ্বারা সংঘটিত হয়ে থাকে। এন্টোবায়োটিক বা টেট্রাসাইক্লিন দিয়ে এই রোগের চিকিৎসা করা হয়ে থাকে। সাধারনুত মানুষ থেকে এই রোগ (Common Cat Diseases) বিড়ালে না ছড়ালেও বিড়াল থেকে রোগটি মানুষে সংক্রমিত হতে পারে। 

৩। ফেডিং কিটেন সিনড্রোম/ Fading Kitten Syndrome (FKS)

FKS এই রোগটিতে অনেক ধরনের সিম্পটমস দেখতে পাবেন। বাচ্চা বিড়ালের এই রোগ হলে খুব কমই সার্ভাইব করতে পারে। প্রেগনেন্ট বিড়াল বা সদ্য জন্মানো বিড়াল থেকে কয়েক সপ্তাহ বয়সী বিড়ালের এই রোগে আক্রান্ত হওয়ার ঝুঁকি অনেক বেশী। এই রোগের  সঠিক কারন সম্পর্কে এখনো জানতে পারা যায়নি। মা বিড়ালের স্বাস্থ্যের উপর অনেকাংশে নির্ভর করে বাচ্চা বিড়াল এতে আক্রান্ত হবে কি হবে না। 

৪। ফেলাইন ইমিউনোডেফিসিয়েন্সি ভাইরাস/ Feline Immunodeficiency Virus (FIV)

FIV রোগটি গভীর কোন ক্ষত বা রক্ত পড়া থেকে হয়ে থাকে। এছাড়াও বাচ্চা বিড়াল জন্মদানের সময় অতিরিক্ত রক্ত ক্ষরনেও এই রোগ হতে পারে। এই রোগে আক্রান্ত হলে বিড়ালে ইমিউনি সিস্টেম অনেক দুর্বল হয়ে পড়ে। ক্ষেত্রবিশেষে মারা যেতেও পারে (cat diseases and symptoms) ।

যেসব বিড়াল এই রোগে আক্রান্ত হওয়ার পরেও সার্ভাইব করে তাদেরকে খুব সতর্কতার সাথে পালতে হয়। তবে এই রোগে আক্রান্ত হয়েও অনেক বিড়ালই অনেকদিন পর্যন্ত বাচতে পারে। 

বিড়ালের স্বাস্থ্যের দিকে আপনাকে কড়া নজর রাখতে হবে। বিশেষ করে বিড়ালের হাঁচি হলে কি করনীয় সেটা আমাদের এই আর্টিকেলে থেকে পড়ে নিতে পারেন।

৫। ফেলাইন লিউকেমিয়া ভাইরাস/ Feline Leukemia Virus (FeLV)

FeLV এই রোগটি ইনফেকশন ধরনের এবং খুবই ছোয়াচে। একিই পাত্রে খাবার খেলে বা এক বিড়ালের সাথে অন্য বিড়ালের সংস্পর্শে এই রোগ ছড়িয়ে থাকে। তবে ভ্যাক্সিন দিয়ে এই রোগটি প্রতিরোধ করা যেতে পারে। তবে এটি একবার হয়ে গেলে সাধারনত ভালো হয় না। অনেক ক্ষেত্রে এই রোগটি সুপ্ত অবস্থায় থাকে। ফলে বুঝা যায় না রোগটি হয়েছে কি হয় না। এতে করে অনেক সময় বিড়ালের ইমিউনি সিস্টেম দুর্বল হয়ে মৃত্যু ঘটতে পারে। 

খাবার ঠিকমত না দিলে বা অতিরিক্ত খাবার দিলে বিড়ালের ডায়রিয়া বা উদরাময়, ডিহাইড্রেশনসহ বিভিন্ন জটিল রোগে আক্রান্ত হতে পারে।

৬। ডেফনেস/ Deafness (Common Cat Diseases)

কিছু বিড়াল জন্ম থেকে শুনতে পায় না। এক্ষেত্রে এটি ভালো হয় না। তবে নীল চোখ সম্পন্ন সাদা বিড়ালগুলি বেশিরভাগ ক্ষেত্রে জন্ম থেকেই এটি হয়ে থাকে। অর্থাৎ শুনতে পায় না। তবে সবসময়ই এমনটি নাও হতে পারে। 

৭। ফেলাইন ইনফেকসিয়াস পেরিটোনিটিস/ Feline Infectious Peritonitis (FIP)

FIP রোগটি খুবই সংক্রামক এবং এক বিড়াল থেকে অন্য বিড়ালে দ্রুত ছরিয়ে যায়। সাধারনত যেখানে বিড়ালের সমাগম বেশী সেখানে বিড়ালদের রোগ ছড়ানোর হার অনেক বেশী। এই রোগের (Common Cat Diseases) একটি কারন হচ্ছে জেনেটিক বা বংশগত। মিউটেট হয়ে এক বিড়াল থেকে অন্য বিড়ালে ছড়িয়ে পড়ে এটি। এই রোগটি ফ্যাটাল অর্থাৎ রোগ হলে মৃত্যুহার অনেক বেশী। 

৮। হিপ ডিস্প্লেসিয়া/ Hip Dysplasia

এটিও একপ্রকার জেনেটিক ডিজিজ। তবে দ্রুতই এর লক্ষন প্রকাশ পায় না। বিড়ালদের তুলনায় কুকুরদের মাঝে এই রোগ বেশী হয়ে থাকে। তবে সার্জারীর মাধ্যমে এই রোগ নিরাময় করা সম্ভব। 

বিড়ালের বাচ্চার পাশাপাশি আপনাকে অবশ্যই মা বিড়ালের প্রতিও যথেষ্ট যত্নশীল হতে হবে।

৯। ফেলাইন সেরেবেল্লার হাইপোপ্লাসিয়া/ Feline Cerebellar Hypoplasia (FCH)

FCH রোগটি হয়ে থাকে  feline distemper এর দ্বারা। বাচ্চা বিড়াল জন্মদানের এক দুই সপ্তাহ পড়ে মা বিড়ালের এই রোগ হতে পারে। রোগটি সেরেব্রাম আক্রান্ত করে থাকে। অর্থাৎ এটি একটি নিউরোলজিকাল রোগ। এর ফলে বিড়াল ঠিকমত হাটা চলা করতে পারে না। অনেক সময় মাথা নিয়ন্ত্রনেও রাখতে পারে না এই রোগটি হওয়ার ফলে। 

এছাড়া আপনার বিড়ালের যদি সদ্য জন্মানো বাচ্চা থাকে তাহলে তাদের টেক কেয়ার সম্পর্কে জানতে আমাদের আর্টিকেল পড়ুন।

১০। হাইপারট্রোপিক কার্ডিওমিওপেথি/ Hypertrophic Cardiomyopathy

কিছু প্রজাতির বিড়াল এই HCM রোগে অনেক বেশী আক্রান্ত হয়ে থাকে। এই প্রজাতির বিড়ালের মাঝে Maine Coon Cats, Ragdolls, এবং Sphynx উল্লেখযোগ্য। এটি জেনেটিক হওয়ায় সাধারনত মাঝ বয়সী বা বেশী বয়স্ক বিড়ালকে বেশী আক্রান্ত করে। 

১১। পলিসিস্টিক কীডনি ডিজিজ /Polycystic Kidney Disease (PKD)   

এই Polycystic kidney রোগটি পার্সিয়ান ক্যাট Persian cats বা এই ধরনের প্রজাতির বিড়ালের মাঝে বেশী দেখা যায়। এটিঅ এক প্রকার জেনেটিক ডিজিজ যা কীডনিতে সংক্রমিত হয়ে থাকে। প্রথম দিকে ডায়াগনসিস করানো গেলে বেশ কিছুদিন পর আর ডায়াগনসিস করানো যায় না। এই রোগ নিয়ে অনেক গবেষণা চলছে যাতে বিড়ালের শরীর থেকে এই জীনটি রিমুভ করে এই রোগ থেকে বিড়াল মুক্তি পেতে পারে। 

প্রসবের পর মা বিড়াল ও বাচ্চা বিড়ালের যত্ন কীভাবে নিবেন How to Take Care of Newborn Kittens with Mother

১২। ফ্লী ট্রান্সমিটেড ডিজিজ/ Flea-Transmitted Diseases

এটি প্যারাসাইট ধরনের রোগ (Common Cat Diseases)। যদিও রোগটি খুবই মারাত্নক। প্যারাসাইট থেকে বিড়ালের নিম্নোক্ত রোগ হতে পারে ঃ

  • হেমোবারটোনেল্লা/ Hemobartonella বা hemobartonellosis প্যারাসাইট যা বিড়ালের রক্ত শোষন করে বিড়ালকে রক্তশূণ্যতা করে ফেলে। এটি খুবই বিপদজনক বিশেষ করে বিড়াল ছানার জন্য ফ্যাটাল অর্থাৎ মৃত্যুর কারন হতে পারে। ট্রিটমেন্টের মাধ্যমে বিড়াল সুস্থ হয়ে উঠতে পারে। ট্রিট্মেন্টকালীন সময়ে বিড়ালকে রক্ত পর্যন্ত দিতে হতে পারে। 
  • এনেমিয়া/ Anemia যা বিড়ালের রক্ত গ্রহনের মাধ্যমে বেচে থাকে। বিড়ালের শরীরে অনেকদিন তারা বেচে থাকতে পারে। 

১৩। ট্যাপওর্ম/ Tapeworms (Common Cat Diseases)

প্যারাসাইট রোগাক্রান্ত হলে ভেটরা সাধারনত এই রোগের চিকিৎসা দিয়ে থাকেন। তবে ট্রিটমেন্টের সময় বিড়ালের লালার স্যাম্পল নিয়ে যেতে হয়। একিই লক্ষন অন্য প্যারাসাইট roundworms এর ক্ষেত্রেও দেখতে পাবেন। 

নতুন বিড়ালকে কীভাবে পুরাতন বিড়ালের সাথে পরিচয় করিয়ে দিবেন? How to Introduce Cats Fast

ফ্লী/ Flea থেকে রোগ প্রতিরোধে কী করবেন?

  • প্রতিদিন বিড়ালের চেক করবেন এবং ফ্লী কম্ব ব্যবহার করবেন।
  • ফ্লী প্রিভেনটিভ মেডিকেশন দিবেন নির্দিষ্ট সময়ে। 
  • ফ্লোর ভ্যাকুয়ম করেন নিয়মিত। 
  • বেড নিয়মিত ওয়াশ করুন। 

আপনি যদি মনে করেন আপনার বিড়াল অসুস্থ তেবং উপরের রোগ গুলির সাথে লক্ষনগুলি মিলে যাচ্ছে তবে এক মুহুর্ত দেরী না করে ভেটের নিকট চলে যান। হেলথ রিলেটেড যেকোন ইস্যুতে ভেটের সাথে কনসাল্ট করুন। তারা আপনার বিড়ালের যথাযথ পরীক্ষা নিরীক্ষা দ্বারা রোগের কারনসহ রোগটি নির্ণয় করতে পারবেন।

এছাড়াও ট্রিটমেন্টের সময় (Common Cat Diseases) বিড়ালের মেডিকেল হিস্ট্রিও খুবই গুরুত্বপূর্ন। ভেটরাই আপনার বিড়ালের জন্য সবথেকে ভালো চিকিৎসা রিকোমেন্ড করতে পারবেন। 

14 thoughts on “বিড়ালের সাধারন কিছু রোগ Common Cat Diseases”

  1. আমাদের বিরাল টা লাস্ট ৩/৪ দিন যাবত অনেক অশাভাবিক ভাবে মেউ মেউ করতেছে.. আর যেখানে সেখানে গরাগরি করতাছে.. প্লিজ একটু জানান ওর কি সমস্যা হইছে

    Reply
  2. আমার বিড়াল ছানা হঠাৎ করে খুব দুর্বল হয়ে পড়েছে ।
    একা একা থাকে একটা কোনায় বসে বসে ঘুমিয়ে থাকে ওর মায়ের থেকে দুধ খাচ্ছে না । আমি এখন কি সাজেশন পেতে পারি

    Reply
  3. আমার বিড়াল মাটির সাথে শুধু ঘসা দিচ্ছে, মাটির সাথে পেট দিয়ে শুয়ে পরছে এবং বিকট আওয়াজে ডাকছে

    Reply
  4. আমার বিড়ালের বয়স ৩/৪ মাস হবে। নাক দিয়ে নিঃশ্বাস ছাড়ার সময় আওয়াজ করে। এখন কি করবো?

    Reply
  5. আমা বিড়ালটির বয়স 3 মাস। গত 1 মাস ধরে মাঝে মাঝেই ওর পায়ে কী যেন সমস্যা হচেছ বুঝতে পারছি না। হাটতে গেলে পরে যায়। স্যালাইন পুশ করেছি। কর্টান সিরাপ খাইয়েছি। এছাড়া ডাক্তারের পরামর্শমতো এ্যান্টিবায়োটিক ও অন্যান্য ঔষধ খাওয়ানো হয়েছে। কিন্তু বারবার একই সমস্যা হচ্ছে। উল্লেখ্য, বিড়ালটি ওর মায়ের দুধ খেতে পারেনি। ওকে আমরা রাস্তায় কুড়িয়ে পেয়েছিলাম। অপুষ্টি আছে কিনা কীভাবে বুঝবো এবং এখন করণীয় কী। গরম শেক দেয়াও চলছে।

    Reply
  6. আমার বিড়ালটার মুখদিয়ে প্রচন্ডরকম লালা ও লালার সাথে রক্ত ঝড়ে।

    Reply

Leave a Comment