কুকুরের সাধারণ কিছু রোগ common dog diseases

আপনি কি একটি কুকুর এডপ্ট করার কথা ভাবছেন? যদি আপনি একটি কুকুর এডপ্ট করার কথা ভেবে থাকেন তাহলে আপনাকে কুকুরের কিছু সাধারণ রোগের (common dog diseases) বিষয়ে ধারনা নিয়ে রাখতে হবে। একজন দায়িত্ববান পেট প্যারেন্ট সর্বদা তার পেট এর স্বাস্থ্যের বিষয়ে সচেতন থাকেন।

তাই আপনি যখন পেট প্যারেন্ট হওয়ার কথা ভাবছেন তখন আপনার উচিৎ কুকুরের সাধারণ কিছু রোগ common dog diseases এবং তার লক্ষন সম্পর্কে জেনে নেওয়া। এতে আপনার পেট অসুস্থ হয়ে পড়লে আপনি দ্রুত যথাযথ পদক্ষেপ নিতে পারবেন।

এই আর্টিকেলে আমরা কুকুরের কিছু কমন হেলথ ইস্যু এবং এর ক্লিনিকাল লক্ষনগুলো নিয়ে আলোচনা করেছি। চলুন তাহলে জেনে নিই। 

অসুস্থ কুকুরের লক্ষণ

কুকুররা আমাদেরকে বলতে পারেনা যে তারা কেমন অনুভব করছে। তাই আপনার কুকুর অসুস্থ কিনা তা জানার একমাত্র উপায় হচ্ছে অসুস্থতার লক্ষণগুলোর দিকে খেয়াল রাখা। সবচেয়ে কমন কিছু লক্ষণগুলো হচ্ছেঃ

  • এনার্জি লেভেলের পরিবর্তন
  • দৈনন্দিন অভ্যাস, আচরণ এবং পার্সোনালিটিতে পরিবর্তন
  • ইউরিন, স্টুল এর পরিবর্তন কিংবা ইউরিন, স্টুলের ফ্রিকোয়েন্সিতে পরিবর্তন
  • চলাফেরা কিংবা দৌড়ানোর সময় ব্যাথা অনুভব করছে পরিলক্ষিত হলে
  • ডায়রিয়া
  • কাশি বা হ্যাকিং
  • অত্যাধিক লালা কিংবা তৃষ্ণা পরিলক্ষিত হওয়া
  • ড্রাই এবং ইচি স্কিন
  • অতিরিক্ত বমি হওয়া
  • হটাত ওজন হ্রাস পাওয়া
  • ক্ষুদামন্দা
  • জ্বর

আপনার কুকুর যদি অস্বাভাবিক আচরণ করে থাকে তাহলে আপনার উচিৎ দ্রুত কোন পশুচিকিৎসকের পরামর্শ গ্রহন করা। আপনি যত দ্রুত আপনার পোষা কুকুরের অসুস্থতার লক্ষণ গুলো চিহ্নিত করতে পারবেন আপনি তত দ্রুত যথাযথ পদক্ষেপ গ্রহণ করতে পারবেন। 

কুকুরের সাধারণ কিছু রোগ common dog diseases

চলুন উপরের লক্ষণগুলো পরিলক্ষিত হলে কুকুরের কি কি রোগ হতে পারে তা সম্পর্কে জেনে নেই।

আথ্রাইটিস

ক্যানাইন আথ্রাইটিস হলো জয়েন্টের ইনফ্ল্যামেশন। সাধারণত বয়স্ক কুকুরদের মধ্যে এই রোগ দেখা যায়। এই অবস্থায় কুকুর ব্যাথা অনুভব করতে পারে এবং এর চলফেরা কিংবা এক্সারসাইজে প্রভাব ফেলতে পারে। 

তবে সৌভাগ্যক্রমে ক্যানাইন আথ্রাইটিস নিয়ে চিকিৎসা বিজ্ঞান ব্যাপক গবেষনা করেছে। মেডিকেশন, ফিজিক্যাল থেরাপি কিংবা হোপিওপ্যাথিকের মাধ্যমে এর চিকিৎসা করা সম্ভব। এছাড়া গ্লুকোসামনিও কুকুরের আথ্রাইটিস রোগের উপসর্গ প্রতিরোধ এবং উপশমের ক্ষেত্রে বেশ কার্যকরী ভূমিকা পালন করে থাকে। 

অবেসিটি কিংবা স্থূলতা

সাম্প্রতিক এক পরিসংখ্যান অনুযায়ী প্রায় ৬০% কুকুর ওভারওয়েট কিংবা স্থূল। স্থূলতা কুকুরের ক্যান্সার, আথ্রাইটিস, ডায়বেটিস, হৃদরোগ এবং উচ্চ রক্তচাপের ঝুঁকি বাড়ায়। 

কুকুরের অবেসিটি বা স্থূলতা এড়ানো কিংবা চিকিৎসার সবচেয়ে কার্যকরী উপায় হচ্ছে আপনার পোষা কুকুরকে হেলদি ডায়েট সরবরাহ করা এবং কুকুরকে নিয়িমিত এক্সারসাইজ করার অভ্যাস করানো। ক্ষুধার্ত মনে হলেও আপনার কুকুরকে অতিরিক্ত খাবার দেওয়া থেকে বিরত থাকুন। কুকুরের মানুষের চেয়ে কম ক্যালরির প্রয়োজন হয়। আপনার পোষা কুকুরের খাবার কিংবা এক্সারসাইজের রুটিন পরিবর্তন করার আগে পশুচিকিৎসকের সাথে পরামর্শ করে নেওয়া ভালো। 

ডেন্টাল ডিসিস

ডেন্টাল ডিসিস বিভিন্ন ধরনের হয়ে থাকে। তবে সবধরনের ডেন্টাল ডিসিসের প্রধান কারণ হচ্ছে কুকুরের অপরিষ্কার মুখ। Hill’s Pet Nutrition অনুযায়ী ৮০% কুকুরেরই দুই বছর বয়সে বিভিন্ন ডেন্টাল ডিসিসের উপসর্গ দেখা যায়। পিরিওডন্টাল ডিসিস, মাড়ির রোগ কিংবা গাম ডিসিস হিসেবেও পরিচিত। এটি কুকুরের সবচেয়ে কমন ডেন্টাল ডিসিস এবং এটি ব্যাক্টেরিয়া দ্বারা সৃষ্ট রোগ।

কিছু কিছু ক্ষেত্রে ব্যাক্টেরিয়ার কারণে কুকুরের দাঁতে পচন ধরে এবং এটি চোয়াল কিংবা স্কালেও সংক্রমিত হতে পারে। তাই চোয়াল কিংবা স্কালকে সংক্রমণ থেকে বাঁচাতে অস্ত্রোপাচারের প্রয়োজন হয়। কুকুরকে বিভিন্ন ওরাল ডিসিস থেকে রক্ষা করার জন্য নিয়মিত কুকুরের দাঁতের যত্ন নেওয়া উচিৎ। 

এলার্জি

কুকুরদের মধ্যে ফুড এলার্জির চেয়ে স্কিন এলার্জি বেশি দেখা যায়। বেশিরভাগ স্কিন এলার্জির Atopic Dermatitis ফর্ম দেখা যায়- রেড, ইচি, স্ক্যালি স্কিন যার ফলে আপনার পোষা কুকুর তার ত্বকে অত্যাধিক আঁচড় কাটে। গ্রীস্ম এবং বসন্ত ঋতুতে যখন বাতাসে প্রচুর এলার্জেন থাকে এবং সিজনাল ফ্লেয়ার আপ হয় তখন মানুষের মতই অনেক কুকুরের স্কিনে স্কিন এলার্জির ক্লিনিক্যাল লক্ষনগুলো দেখা যায়।

এলার্জি পুরোপুরি নিরাময় করা সম্ভব না তবে সহজে পরিচর্যা করা যায়। ওষুধের মাধ্যমে স্কিন এলার্জির চিকিৎসা করা সম্ভব, যেমন কুকুরের জন্য বেনাড্রিল, তবে এতে ফুড এলার্জির ক্ষেত্রে প্রেসক্রাইপ্টিভ ডায়েটের প্রয়োজন হতে পারে। 

স্কিন ইনফেকশন এবং হটস্পট

কুকুরের ত্বকে আঁচড় কিংবা ঘর্ষনের কারণে স্কিন ইনফেকশন হয়ে থাকে। আঁচর কিংবা ঘর্ষনের ফলে সৃষ্ট ক্ষততে ব্যাক্টেরিয়া সংক্রামণের কারণে স্কিন ইনফেকশন হয়ে থাকে। এর ফলে ত্বকে লালচে ভাব, প্রদাহ, চুলকানি কিংবা জ্বালা হতে পারে এবং এটি হটস্পটে পরিণত হয়। আপনার কুকুরকে স্কিন ইনফেকশন থেকে এড়ানোর সবচেয়ে কার্যকরী উপায় হলো তাকে নিয়মিত গোছল করানো এবং আঁচড় কিংবা ঘর্ষনের ফলে ক্ষত তৈরি হলে পশু চিকিৎসকের সাহায্য নেওয়া। কুকুরের ইয়্যাস্ট ইনফেকশন (Yeast Infection) ব্যাক্টেরিয়াজনিত সংক্রমণের তুলনায় কম গুরুতর , তবে এটি কুকুরের জন্য খুব অস্বস্তিকর এবং আক্রান্ত কুকুরকে যথাযথ চিকিৎসা দেওয়া উচিৎ।

স্কিন ইনফেকশনের চিকিৎসার ক্ষেত্রে পশুচিকিৎসক আক্রান্ত স্থানটিকে পরিষ্কার করেন এবং কিছু ওরাল মেডিকেশন এবং টপিক্যাল ট্রিট্মেন্ট প্রেস্ক্রাইব করে থাকেন। এছাড়া তারা কুকুরকে কোন (Cone) কলার পড়িয়ে দেন যেন কুকুরটি আবার আক্রান্ত স্থানকে ইরিটেট না করে।

প্যারাসাইট বা পরজীবি

কুকুরদের মধ্যে সাধারণত সবচেয়ে বেশি যে ধরনের প্যারাসাইট গুলো দেখা যায় সেগুলো হলো ইন্টারনাল প্যারাসাইট (হার্টওয়ার্ম), অন্ত্রের প্যারাসাইট ( হুকওয়ার্ম এবং রিংওয়ার্ম) এবং এক্সটার্নাল প্যারাসাইট (মাছি এবং টিক্স)। যদি আপনার কুকুর দূষিত কোন খাবার খায় কিংবা পরজীবী দ্বারা আক্রান্ত এমন কোন কুকুরের সংস্পর্শে যায় তাহলে আপনার পোষা কুকুরও পরজীবী দ্বারা আক্রান্ত হতে পারে। কুকুরের বাচ্চার ক্ষেত্রে Coccidia এবং প্রাপ্তবয়স্ক কুকুরের ক্ষেত্রে Giardia কন্ডিশন সবচেয়ে বেশি দেখা যায় যার প্রধান কারণ হচ্ছে দূষিত পানি।

ইয়ার ইনফেকশন

কখনো কখনো বংশগত কারণ কিংবা পরিবেশ এর কারণে কুকুরের কানের ইনফকশন হতে পারে। আবার কখনো এলার্জি, অটোইমিউন ডিসঅর্ডার, কানে ওয়াক্স জমে যাওয়া এমনকি কান অতিরিক্ত খোঁচানোর কারণেও কুকুরের কানে ইনফেকশন হতে পারে। কুকুরের কানে ইনফেকশন হলে কুকুর তার মাথায় অতিরিক্ত মাত্রায় আঁচড় কাটে এবং অতিরিক্ত মাত্রায় মাথা নাড়াতে থাকে। কুকুরের কানের ইনফেকশনের উপসর্গগুলো হলো কানে দূর্গন্ধ হওয়া, কানের ভিতরে লালচে হয়ে যাওয়া কিংবা ফুলে যাওয়া , কান থেকে রক্ত বা পুঁজ বের হওয়া। 

কুকুরের ইয়ার ইনফেকশন হলে দ্রুত পশুচিকিতসকের সাথে যোগাযোগ করা উচিৎ। পশুচিকিৎসকরা সাধারনত মেডিকেটেড ক্লিনজার, টপিক্যাল ওষুধ, ওরাল এন্টিবায়োটিক অথবা এন্টী ইনফ্ল্যামেটরি ড্রাগের মাধ্যমে কানের ইনফেকশনের চিকিৎসা করে থাকেন।

মূত্রনালীর ইনফেকশন বা ইউরিনারি ট্র্যাক্ট ইনফেকশন (ইউটিআই)

কুকুরের মূত্রনালীর ইনফেকশনের সাধারণ উপসর্গগুলো হলো ঘন ঘন প্রস্রাব করা, প্রসাবের সময় অস্বস্তি বা ব্যাথা অনুভব করা, প্রস্রাবের সময় রক্ত বা অনো কোন স্রাব বের হওয়া। যদি আপনার কুকুরের ক্ষেত্রে এই ধরনের কোন উপসর্গ দেখে যায় তাহলে যত দ্রুত সম্ভব একজন পশুচিকিৎসকের সাথে যোগাযোগ করা উচিৎ। ব্লাডার স্টোন বা ইউরিনারি ব্লকেজ এর মত মারাত্মক রোগগুলোর ক্ষেত্রেও এই ধরনের উপসর্গ দেখা যায়।

সফট টিস্যু ইনজুরি

কুকুর যখন তার শরীর টানা দেয় তখন সফট টিস্যু ইনজুরি হতে পারে। এছাড়া এসময় জয়েন্ট মচকে যাওয়া, ত্বক ক্ষতিগ্রস্থ হওয়া এমনকি লিগামেন্ট ছিড়ে যেতে পারে। আমরা এতক্ষন কুকুরের যেসব অসুখ নিয়ে আলোচনা করেছি সেগুলোর কারণ ছিলো ইমিউন সিস্টেম সঠিকভাবে কাজ না করা কিন্ত এই অসুখটির ক্ষেত্রে তা ব্যাতিক্রম। এটি সাধারনত ফিজিক্যাল এক্সিডেন্ট এর কারনে হয়ে থাকে।

অন্যান্য এক্সিডেন্টাল ইনজুরিগুলো হলো কামড় খাওয়া, হাড় ভেঙ্গে যাওয়া, বিষাক্ত খাবার খাওয়া, বাহ্যিক কোন বস্তু দ্বারা আঘাত প্রাপ্ত হওয়া। এই ধরনের ইনজুরির ক্ষেত্রে অনেক সময় অবস্থা খুবই গুরুতর হয়ে পড়ে তখন দ্রুত চিকিৎসার প্রয়োজন হয়ে পড়ে, কিছু কিছু ক্ষেত্রে এই চিকিৎসা খুবই ব্যায়সাপেক্ষ তাই পেট ইন্সুরেন্স করা থাকলে সুবিধা হয়। 

কুকুরের ব্রিড বা প্রজাতি অনুযায়ী বংশগত রোগ

অনেক জনপ্রিয় কুকুরের জাত বিভিন্ন জেনেটিক ডিসঅর্ডার এবং অসুস্থতা প্রবণ হয়ে থাকে। এই ধরনের ডিসঅর্ডার বা রোগগুলোকে বংশগত রোগ বলা হয়ে থাকে। প্রজনন প্রক্রিয়ার মাধ্যমে এফেক্টেড জিনগুলো পরবর্তী প্রজন্মের কাছে চলে যাওয়ায় এগুলো বংশগত রোগ নামে পরিচিত। গত কয়েক শতাব্দী ধরে কুকুরের নির্দিষ্ট জাতের শারিরীক বৈশিষ্ট্য ধরে রাখার জন্য স্ট্রাটেজিক্যালি ব্রিড করানো হয়। একই প্রজাতির কুকুরের মধ্যে মেটিং এর কারণে পরবর্তী প্রজন্মে নির্দিষ্ট জিনগুলো চলে যায়। ফলে প্রজাতি অনুযায়ী স্পেসিফিক হেলথ রিস্ক থাকে।

সায়েন্টিফিক আমেরিকানের মতে, “ খাঁটি জাতের কুকুরের ক্ষেত্রে উত্তরাধিকার সূত্রে প্রাপ্ত রোগ প্রবণতার পাশাপাশি শারিরীক গঠন এবং আকারের কারণে অন্যান্য স্বাস্থ্য জনিত সমস্যার ঝুঁকিও বেড়েছে, যেমন জার্মান শেফার্ড এবং সেইন্ট বার্নার্ড এর মত বড় আকৃতির কুকুরের ক্ষেত্রে হিপ ডিস্প্লেসিয়া (Hip Dysplasia) এবং ছোট আকৃতির কুকুরের ক্ষেত্রে প্যাটেলা লাক্সেশন (Patella Luxation) বা পায়ের হাটুর স্থানচ্যুতি দেখা যায়। 

কুকুরের প্রজাতি অনুযায়ী বংশগত বৈশিষ্ট্য

নিচে আমরা কুকুরের কিছু জনপ্রিয় প্রজাতির বংশগত ভাবে প্রাপ্ত স্বাস্থ্য জনিত সমস্যা নিয়ে আলোচনা করবো। এসব রোগ এফেক্টেড জিনগুলোর কারনে এক প্রজন্ম থেকে আর এক প্রজন্মে চলে এসেছে।

বিগল (Beagles)

এই প্রজাতির কুকুরগুলোর মধ্যে মৃগীরোগের প্রবণতা বেশি দেখা যায়। মৃগীরোগ হলো একটি স্নায়বিক রোগ যার ফলে মস্তিষ্কে ইলেক্ট্রিক্যাল এনার্জির বিস্ফোরণ হয় এবং দেহ কাঁপতে থাকে।

বোস্টন টেরিয়ার (Boston Terriers)

বোস্টন টেরিয়ার প্রজাতিতে চেরি আই নামন এক ধরনের চক্ষু রোগ বেশি দেখা যায়। এই রোগের ফলে চোখের টিস্যু ফুলে যায় এবং চোখের কোঠরের বাইরে চলে আসে। এছাড়া কুশিং ডিজিজ নামে পরিচিত এন্ড্রোকাইন ডিজঅর্ডারও এই প্রজাতিতে দেখা যায়।

বুলডগ (Bulldogs)

ফ্রেঞ্চ বুলডগ এবং ইংলিশ বুলডগের মধ্যে বেশ কিছু রোগ বেশি দেখা যায়। এরমধ্যে হার্টের সমস্যা, রেসপাইরেটরি ইনফেকশন (Respiratory Infection), হিপ ডিসপ্লেসিয়া (Hip Dysplasia) এবং চেরি আই (Cherry Eye) অন্যতম।

ককার স্পেনিয়েল (Cocker Spaniels)

ইংলিশ ককার স্পেনিয়েল এবং আমেরিকান ককার স্পেনিয়েল অন্যান্য প্রজাতির তুলনায় অর্থোপেডিক সমস্যা বেশি ভুগে। এদের ফ্লপি কানের কারণে এই প্রজাতিগুলোতে ইয়ার ইনফেকশন প্রবণতাও বেশি দেখা যায়। তাদের লোমশ ইয়ার ক্যানেলে ময়েশ্চার আটাকানোর কারণে ইয়ার ইনফেকশন বেশি হয়।

ডাচসান্ড (Dachshunds)

এই প্রজাতির কুকুর পেশীবহুল হওয়াতে এদের মধ্যে ইন্টার্ভারটিব্রাল ডিস্ক ডিজিস (Intervertebral Disc Disease) প্যাটেলা লাক্সেশন (Patella Luxation) এর মত রোগ বেশি দেখা যায়।

জার্মান শেফার্ড (German Shepherds)

জারমান শেফার্ড প্রজাতিতে হিপ ডিস্প্লাসিয়া (Hip Dysplasia) রোগ বেশি দেখা যায়। গোল্ডেন রিট্রিভার এবং জার্মান শেফার্ড এর মতো বড় আকৃতির জাত এর কুকুরগুলো ডিস্প্লাসিয়া রোগ প্রবণ হয়ে থাকে। 

 ল্যাব্রাডর রিট্রিভার (Labrador Retrievers)

এই প্রজাতির কুকুরগুলো এক্সারসাইজ বা অন্য কোন কায়িক পরিশ্রমের পর দূর্বল হয়ে পড়ে। অনেক সময় শারিরিরক ভাবে ফিট থাকার পরও ৫-১০ মিনিট পরিশ্রমের পর এরা অনেক দূর্বল হয়ে যায়।

পুডল (Poodles)

আমেরিকার পুডল ক্লাবের মতে, পুডল প্রজাতির কুকুরগুলোতে অ্যাডিসন ডিজিস (অ্যাড্রিনাল হরমোনের অপর্যাপ্ত উৎপাদন), মৃগীরোগ, হাইপোথাইরয়েডিজম, প্যাটেলার লাক্সেশন সহ অন্যান্য রোগ বেশি দেখা যায়।

সাইবেরিয়ান হাস্কি (Siberian Huskies)

পেমিফিগাস ফোলিসিয়াস (Pemphigus Foliaceus) নামে একটি সুপারফিসিয়াল স্কিন ডিজিস বা চর্মরোগ কুকুরের অন্যান্য প্রজাতির তুলনায় সাইবেরিয়ান হাস্কি প্রজাতিতে বেশি দেখা যায়। এই রোগের কারণে কুকুরের ফুটপ্যাড, নাক, ত্বক ক্ষতিগ্রস্থ হতে পারে এবং অতিরিক্ত লোম ঝরে পড়তে পারে।

ইয়র্কশায়ার টেরিয়ার বা ইয়র্কি (Yorkies)

ইয়র্কশায়ার টেরিয়ার বা ইয়র্কি প্রজাতির কুকুরগুলোর ক্ষেত্রে মাঝে মাঝে দেখা যায় এদের ওয়াইন্ড পাইপ বা শ্বাসনালীতে দূর্বল কার্টিলেজ রিং থাকে যার ফলে শ্বাসনালী ভেঙ্গে যেতে পারে। ওয়াইন্ডপাইপ সরু হয়ে যায় ফলে কাশি কিংবা শ্বাসকষ্ট হতে পারে।

আকার ভেদে কুকুরের কমন স্বাস্থ্যজনিত সমস্যা

বিভিন্ন প্রজাতির কুকুরের আকৃতি বিভিন্ন ধরনের হয়ে থাকে। কিছু কিছু ক্ষেত্রে কুকুরের স্বাস্থ্য জনিত সমস্যা গুলো কুকুরের আকৃতির উপর নির্ভর করে। কিছু কিছু রোগ আকারে বড় কুকুরদের মাঝে বেশি দেখা যায় আবার কিছু কিছু রোগ আকারে ছোট কুকুরদের মধ্যে বেশি দেখা যায়।

আকারে ছোট কুকুরগুলোর স্বাস্থ্যজনিত সমস্যা

আকারে ছোট কুকুরগুলোর মধ্যে সাধারণ যেসকল রোগ দেখা যায় সেগুলো হলোঃ

  • ব্র্যাকিসেফালিক এয়ারওয়ে সিনড্রোম বা উপরের শ্বাসনালীর অস্বাভাবিকতা (Brachycephalic Airway Syndrome)
  • ইকট্রোপিয়ন বা চোখের পাতা বাহ্যিক দিকে বাঁকানো (Ectropion)
  • ইন্টারভার্টিব্রাল ডিস্ক ডিজিজ (IVDD)
  • মিট্রালl ভালভ ডিজিজ (Mitral Valve Disease)
  • প্যাটেলার লাক্সেশন (Patellar Luxation)
  • শ্বাসনালীর সমস্যা (Tracheal Collapse)

আকারে বড় কুকুরগুলোর স্বাস্থ্যজনিত সমস্যা

আকারে বড় কুকুরগুলোর মধ্যে সাধারণত যেসকল রোগ দেখা যায়, সেগুলো হলোঃ

  • অর্টিক স্টেনোসিস (Aortic Stenosis)
  • ব্লোট (Bloat)
  • হার্টের দূর্বলতা (Dilated Cardiomyopathy)
  • গ্যাস্ট্রিক টর্শন (Gastric Torsion)
  • এলবো এবং হিপ ডিস্প্লাসিয়া (Elbow and Hip Dysplasia)
  • হাইপোথাইরয়েডিজম (Hypothyroidism)
  • অস্টিওআর্থারাইটিস (Osteoarthritis)
  • ওয়বলার সিন্ড্রোম (Wobbler Syndrome)

জার্নাল অফ ভেটেরিনারি মেডিসিন-এ প্রকাশিত একটি সমীক্ষা অনুসারে, প্রজাতি নির্বিশেষে উত্তর আমেরিকার ১৫.৫৬% কুকুর হিপ ডিসপ্লাসিয়া রোগে আক্রান্ত।

বয়স ভেদে কুকুরের স্বাস্থ্যজনিত সমস্যা

বয়স বাড়ার সাথে কুকুরের মাঝে রোগে আক্রান্ত হওয়ার প্রবণতাও বেশি দেখা যায়। তবে এমনটা ভাবা ঠিক না যে বয়স বাড়লেই কুকুর অসুস্থ হয়ে পড়বে। কিছু কিছু কুকুরের বয়স বেশি হলেও তারা সুস্থ ভাবে জীবন যাপন করতে পারের। বরং কিছু কিছু রোগের ক্ষেত্রে প্রাপ্তবয়স্ক কুকুরের তুলনায় পাপ্পি বা কুকুরছানাদের আক্রান্ত হওয়ার প্রবণতা বেশি দেখা যায়।

পাপ্পি বা কুকুরছানাদের মধ্যে যেসব রোগ বেশি দেখা যায়

আগে কুকুরছানাদের প্রায়ই বিভিন্ন রোগে আক্রান্ত হওয়ার প্রবণতা দেখা যেত্যো, এর মধেয় সবচেয়ে বেশি দেখা যেতো ডিস্টেম্পার এবং অ্যাডেনোভাইরাস (ক্যানাইন হেপাটাইটিস)। তবে বর্তমানে ভ্যাকসিনের কারণে এসকল রৈগে কুকুরছানাদের আক্রান্ত হওয়ার প্রবণতা কম দেখা যায়। তবে আপনার কুকুর পুরোপুরি এসব রোগ মুক্ত কিনা তা  নিশ্চিত হয়ে নেওয়া ভালো, প্রয়োজনে পশু চিকিতসকদের সাথে যোগযোগ করতে পারেন।

সাধারণত কুকুরছানা যেসকল রোগে আক্রান্ত হয়ঃ

  • ক্যানাইন পারভোভাইরাস (Canine Parvovirus)
  • ডিস্টেম্পার (Distemper)
  • অ্যাডেনোভাইরাস (Adenovirus)
  • লেপ্টোস্পাইরোসিস (Leptospirosis)
  • হাইপোগ্লাইসেমিয়া (Hypoglycemia)
  • হুইলপিং কমপ্লিকেশন (Whelping Complications)

বয়স্ক কুকুরের স্বাস্থ্যজনিত সমস্যা

বয়স্ক মানুষের মতই বয়স্ক কুকুরগুলোও প্রায় একই রক্ম রোগে আক্রান্ত হয়ে থাকে, যেমন আথ্রাইটিস কিংবা চোখে ছানি পড়া। বয়স্ক কুকুরগুলো সাধারণত যেসকল রোগে আক্রান্ত হয় সেগুলো হলোঃ

  • আর্থ্রাইটিস (Arthritis)
  • ক্যান্সার (Cancer)
  • চোখের ছানি এবং অন্ধ হয়ে যাওয়া (Eye Cataracts and Blindness)
  • বধিরতা (Deafness)
  • অসংযম (Incontinence)
  • কিডনীর ব্যাধি (Kidney Disease)
  • স্থূলতা (Obesity)

ক্যান্সার এমন একটি চ্যালেঞ্জিং রোগ যেটার চিকিৎসা খুবই ব্যাবহুল। যদি আপনার পেট ইন্সুরেন্স করা না থাকে তাহলে এই ব্যয় বহন করা আপনার জন্য চ্যালেঞ্জিং হতে পারে। বয়স্ক কুকুরদের ক্যান্সারে আক্রান্ত হওয়ার প্রবণতা বেশি এমনকি ১০বছরের বেশি বয়সী কুকুরদের মৃত্যুর প্রধান কারণই হচ্ছে ক্যান্সার।

কুকুরের স্বাস্থ্য সচেতনতা এবং সুস্থ রাখার টিপস

বেশিরভাগ কুকুরের ক্ষেত্রেই দেখা যায় তাদের জীবদ্দশায় দু একবার রোগে আক্রান্ত হয়েই থাকে। তবে আপনি যদি রুটিন মাফিক কুকুরের স্বাস্থ্যের যত্ন নেন তাহলে আপনার কুকুরের রোগে আক্রান্ত হওয়ার ঝুঁকি কমানো সম্ভব। আপনার কুকুরের স্বাস্থ্যের যত্ন নিতে এবং কুকুরকে সুস্থ রাখতে কিছু প্রয়োজনীয় টিপস নিয়ে নিচে আলোচনা করা হলো।

রুটিন ভেট এক্সাম

বেশিরভাগ পশু চিকিৎসক পরমার্শ দেন যে পেট প্যারেন্টরা যেন বছরে অন্তত একবার তার পেট এর স্বাস্থ্যের মেডিকেল চেক আপ করান। এই মেডিকেল চেক আপ এর মাধ্যমে আপনি জানতে পারবেন আপনার কুকুর সুস্থ নাকি কোন রোগে আক্রান্ত, রোগে আক্রান্ত হলে করনীয় চিকিৎসাসহ স্বাস্থ্য বিষয়ক অন্যান্য খুঁটিনাটি। যদি আপনার কুকুর কোন ভাবে আঘাত পায় বা আপনি যদি আপনার কুক্কুরের মাঝে কোন অস্বাভাবিকতা লক্ষ্য করেন অথবা আপনার কুকুরের মাঝে কোন রোগের উপসর্গ লক্ষ্য করেন তাহলে আপনার পেটকে দ্রুত কোন পশু চিকিৎসকের কাছে নিয়ে যাওয়া উচিত।

গ্রুমিং এবং টিথ ক্লিনিং

বেশিরভাগ পেট প্যারেন্ট তাদের কুকুরকে নিয়মিত গোছল করালেও তাদের দাঁতের দিকে খুব একটা খেয়াল করেন না। VCA হাসপাতালের মতে, পিরিওডন্টাল রোগের মতো দাঁতের সমস্যা এড়াতে প্রতিদিন অন্তত দুবার বা প্রতি সপ্তাহে অন্তত তিনবার  আপনার কুকুরের দাঁত ব্রাশ করা উচিত। যদি দাঁত ব্রাশ আপনার কুকুরের দৈনন্দিন রুটিনের অংশ না হয় তাহলে হটাত করে আপনার কুকুরের দাঁত ব্রাশ করাটা কষ্টসাধ্য হয়ে যাবে। তাই আপনার বাচ্চা অবস্থা থেকেই নিয়মিত আপনার কুকুরের দাঁত ব্রাশ করে এটিকে তার অভ্যাসে পরিণত ক্রা ভালো।

স্বাস্থ্যকর খাবার

কুকুরদেকে দিনে অন্তত দুবার খাওয়ানো উচিত। তাদেরকে দেওয়া খাবারের পরিমাণ তাদের আকৃতি অনুযায়ী যেন যথেষ্ট হয় সে ব্যাপারে খেয়াল রাখা উচিত। পশু চিকিৎসকরা পরামর্শ দেন যে, কুকুরকে এমন ভাবে খাবার দিতে হবে যেন তাদের মোট ক্যালরির ১০% খাবারের মধ্যে থাকে। যদি কুকুর এক্টিভ না হয় তাহলে অতিরিক্ত খাবার দেওয়ার ফলে কুকুর অবেসিটি বা স্থুলতা রোগে আক্রান্ত হতে পারে।

আপনার কুকুরকে তাদের এলার্জি এবং অন্যান্য প্রয়োজনীয় উপাদানের উপর নির্ভর করে খাবার দেওয়া উচিত। আপনার কুকুরের জন্য উত্তম খাবার এবং প্রয়োজনীয় পুষ্টি উপাদান সম্পর্কে যদি আপনি না জেনে থাকেন তাহলে আপনার উচিত কোন পশু চিকিৎসকের সাথে যোগাযোগ করা।

নিয়মিত ব্যায়াম

কুকুরের হাড়, পেশী এবং জয়েন্টগুলিকে সুস্থ রাখতে এবং ওভারওয়েট এড়াতে নিয়মিত ব্যায়ামের প্রয়োজন। ASPCA এর পরামর্শ অনুযায়ী আপনার কুকুরকে সুস্থ রাখতে সপ্তাহে পাঁচবার ৩০মিনিট করে হাঁটানো উচিত।

অসুস্থতার লক্ষনগুলো জেনে রাখুন

আমাদের পেটগুলো আমাদের সাথে তাল মিলিয়ে চলতে শিখে যায়। তারা আমাদেরকে ঘুম থেকে জাগিয়ে তোলে, প্রতিদিন সকালে আমাদের সাথে হাঁটতে যায় এবং নাস্তা করে। এগুলো তাদের অভ্যাসে পরিণত হয়ে যায়। আপনি আপনার পেট এর সাথে যত সময় কাটাবেন আপনি তার অভ্যাস, আচড়ন সম্পর্কে ততবেশি জানতে পারবেন। যদি আপনি আপনার পেট এর অভ্যাস বা আচরণে কোন অস্বাভাবাবিকতা লক্ষ্য করেন কিংবা বমি, ডায়রিয়া বা ঘামাচির মত কোন অসুস্থতা বা উপসর্গ লক্ষ্য করেন তাহলে দ্রুত কোন পশু চিকিৎসকের সাথে পরামর্শ করুন।

পেট এর জন্য স্বাস্থ্য বীমা করে রাখুন

মানুষের মত কুকুররাও বিভিন্ন স্বাস্থ্য সমস্যায় ভোগে। অনেক সময় কুকুররা মানুষের মতই এমন কোন জটিল রোগে আক্রান্ত হতে পারে যার চিকিৎসা খুবই ব্যায়বহুল হতে পারে এতে আপনি আর্থিক চ্যালেঞ্জে পড়ে যেতে পারেন। তাই এই ধরনের সমস্যা এড়ানোর জন্য আপনি আপনার পোষা কুকুরের জন্য পেট ইন্সুরেন্স করে রাখতে পারেন। 

Leave a Comment