শীতকালে, অন্য সময়ের তুলনায় অল্প করে মারকিউরি নিঃসরন হয় এবং বাতাসের আর্দ্রতাও সহ্যসীমার বাইরে থাকে। ডিসেম্বর থেকে ফেব্রুয়ারী এই মাঝের সময়টাতে প্রচুর ঠান্ডা পড়ে। মানুষ সহ অন্যান্য প্রাণীদেরও এই শীতের জন্য কষ্ট করতে হয়।
তখন কুকুরসহ আমাদের পোষা প্রাণীদের নিরাপত্তা winter dog care এবং তাদের আরামের কথা এ সময়টিতে খেয়াল রাখা আমাদের অবশ্য কর্তব্য।
খুব বেশি মারাত্মক দুটি ঝুকি যা কুকুরদের মধ্যে দেখা যায় তা হলো:
- ফ্রস্টবাইট এবং
- হাইপারথারমিয়া
শীতকালে কিভাবে আপনার পোষা কুকুরের যত্ন নিবেন?
ফ্রস্টবাইটঃ
ফ্রস্টবাইট শুরু হয় যখন কুকুরের ঠান্ডা লেগে যায়। শরীরে নিজের তাপমাত্রা ধরে রাখতে শরীরের কেন্দ্রে থাকা রক্ত টেনে ধরে। তখন কুকুরের কান, পা এবং লেজের অবস্থা হিমশীতল বরফের ন্যায় হয়ে যায় যা শরীরের টিস্যুকে ড্যামেজ করতে পারে।
ফ্রস্টবাইট যে খুব তাড়াতাড়ি হয় তা নয়। লক্ষ্য করুন তীব্র শীতের মধ্যে আপনার কুকুরের হাত পা সহ অন্য যেকোনো অঙ্গ-প্রত্যংগ কখনো ধূসর হয়ে যাচ্ছে কি না।
কখনো কখনো ফ্রস্টবাইট এর কারনে শরীরের বিভিন্ন অংশ শক্তও হয়ে যায়। ফ্রস্টবাইট এর কারনে শরীরের ভেতরের অংশে তীব্র ব্যাথাও অনুভূত হতে পারে। ফ্রস্টবাইট তীব্র আকার ধারন করলে চামড়া কালো হতে শুরু করে এবং এক সময় তা খসে পড়ে।
হাইপোথারমিয়াঃ
আরো একটি উল্লেখযোগ্য শীতকালীন রোগ হলো হাইপোথারমিয়া। যখন একটি কুকুর শীতের মধ্যেও বাইরে চলাচল করে তখন এই অসুখ হয়ে থাকে, তীব্র শীতে ভিজে যায় অথবা হয়তো কুকুরটির শরীর আগে থেকেই দূর্বল থাকে অথবা তীব্র শীতের কারনে রক্ত সঞ্চালনে বাধার তৈরী হয়। এই রোগের মাত্রা অল্প হলে কুকুরটি শীতে কাঁপতে থাকবে। এ সময়ে ঠান্ডায় কান এবং পায়ের পাতা জমে যায়।
যখন এর মাত্রা ধীরে ধীরে বাড়তে থাকে তখন, আপনার কুকুর হয়তো ডিপ্রেশনে চলে যেতে পারে, চামড়ায় এলার্জি দেখা দিতে পারে এবং অন্যান্য দূর্বলতা দেখা দিবে।
যখন পরিস্থিতি আরো খারাপের দিকে যেতে থাকবে তখন, মাংসপেশী শক্ত হতে থাকবে, হৃদস্পন্দন ধীরে ধীরে কমতে থাকবে এবং এক সময়ে বন্ধ হয়ে যাবে। তাই হাইপোথারমিয়াকে মরণঘাতী বলা হয়ে থাকে। অর্থাৎ এতে করে আপনার পোষা কুকুরের মৃত্যু হতে পারে।
আপনি জানেন কি? দাঁত উঠার সময় কুকুরের প্রয়োজন একটু বাড়তি যত্ন। আমাদের আর্টিকেলটি পড়ুন এবং জেনে নিন।
শীতকালীন সময়ে কি কি উপায়ে আপনি আপনার কুকুরকে তার পূর্ণ নিরাপত্তায় সাহায্য করতে পারেন?
আপনার পোষা প্রাণীকে বাসার ভেতর রাখুন
সব পোষা প্রাণীরই ঠান্ডা লাগে সে কুকুর, বিড়াল, পাখি বা খরগোশ যাই হোক না কেন। winter dog care সবচেয়ে ভালো হয় যদি তাদের ঠান্ডা না লাগতে দেয়া যায় এবং ঘরের ভেতর এমন নিরাপত্তার ব্যবস্থা করা যেন ঠান্ডা জাতীয় অসুখ না হতে পারে৷
আমাদের অনেকেরই শিকার প্রবণ পোষা প্রাণী আছে (কুকুর এবং বিড়াল) যারা বাইরে বিচরণ করতে ভালোবাসে। এরা প্রায়ই বাসার আশেপাশে ঘুরে আমাদের গাড়ির নিচে ঘুমিয়ে যায়। অবশ্যই আমাদের খেয়াল রাখতে হবে যেন আমরা গাড়ি স্টার্ট দেয়ার পূর্বে চেক করে নেই।
শীতকালে কিভাবে আপনার পোষা কুকুরের যত্ন নিবেন?
পোষা কুকুরকে গরম কাপড়ে মুড়িয়ে রাখুন
আপনি কি শীতকালে নিজে কখনো সোয়েটার বা যেকোনো গরম কাপড় ছাড়া কখনো বাইরে যেতে চাইবেন? না। একইভাবে পোষা প্রাণীদের ক্ষেত্রেও একই নিয়ম প্রযোজ্য৷
এমন অনেক সোয়েটার বা গরম কাপড় পাওয়া যায় প্রাণীদের দোকানগুলোয় বিড়াল এবং কুকুরদের জন্য। আপনার কুকুরের গায়ে সুন্দর করে মানায় এমন কাপড় কিনুন এবং তাদের আরামদায়ক চলাচল নিশ্চিত করুন।
এছাড়া আপনার কুকুর যদি একটু বেশি ডাকাডাকি শুরু করে, তাহলে ভাবার কিছু নেই। আমাদের আর্টিকেলটি পড়ুন আশা করি সমাধান পেয়ে যাবেন।
পোষা প্রাণীদের পশম হলো প্রাকৃতিকভাবে গরম থাকার জন্য তৈরী
কুকুর এবং বিড়ালদের চওড়া পশম তাদের জন্য আশির্বাদ হিসেবে বিবেচিত হয় প্রাকৃতিকভাবে গরম থাকার জন্য। এজন্য, শীতকালে এদের পশম শেইভ করা বন্ধ রাখতে হয়। তার উপর গোসলের ঠিক পর পরই তাকে বাইরে হাঁটতে নিয়ে যাওয়া থেকে বিরত রাখতে হবে। পশম শুকানোর আগ পর্যন্ত আপনাকে বাইরে যাওয়ার জন্য অপেক্ষা করতে হবে।
যে কোন সময় কোন কুকুর যদি আপনাকে কামড় দেয়, তাহলে কি করবেন? আসুন দেখে নেই আপনার করনীয় কি?
গরম এবং আরামদায়ক বিছানা তৈরী করুন
আপনার কুকুরকে শীতকালে ঠান্ডা ফ্লোরে থাকতে দেয়া উচিত নয়। দীর্ঘ সময় ধরে ঠান্ডা ফ্লোরে থাকার কারনে তারা অসুস্থ হয়ে পড়তে পারে। পোষা প্রাণীদের জন্য বিভিন্ন আকার আকৃতির বিছানা এবং মাদুর পাওয়া যায়।
একটি মাদুর কিনলেই দেখতে পারবেন আপনার পোষা কুকুরটি এর উপর গড়াগড়ি করতে কত পছন্দ করবে। এমন একটি জায়গায় বিছানার ব্যবস্থা করুন যেখানে আবহাওয়া তুলনামূলক গরম। বিছানা পাতার জায়গাটি তার জন্য পরিচিত হওয়া জরুরি যেন সে অস্বস্তি অনুভব না করে।
রুম হিটার দূরে রাখুন
আপনার ঘরের কুকুরটি যদি এমন হয় যে প্রচুর পরিমাণে ঘরের ভেতর ঘুরে বেড়ায়, তাহলে অবশ্যই নিশ্চিত করুন যেন রুম হিটার, ফায়ার প্লেস বা অন্য যেকোনো গরম জিনিস তাদের চলার পথে না পড়ে। পোষা প্রাণী এগুলোর কাছে গিয়ে স্পর্শ করে নিজেদের গায়ে আগুন ধরিয়ে দিতে পারে।
খাওয়ার পানি প্রায়ই বদলে দিন
আমাদের মতই পোষা প্রাণীদেরও শীতকালে পানির পিপাসা কম লাগে। এবং এর প্রধান কারন হলো এই সময়ে পানি স্বাভাবিকের তুলনায় অনেক বেশি ঠান্ডা থাকে এবং এজন্য তারা পানি খেতে আগ্রহ হারিয়ে ফেলে। এজন্য পরামর্শ দেয়া হয় যেন রুম তাপমাত্রায় থাকা পরিষ্কার পানি বারাবার ২-৩ ঘন্টা পর পর বদলে দিতে হবে।
পোষা কুকুরের শীতকালীন স্বাস্থ্য পরীক্ষা
যেসব কুকুরের বাতজনিত সমস্যা আছে তাদের জন্য শীতকাল খুবই বেদনাদায়ক সময়। এক্ষেত্রে কুকুরের মালিকের তার প্রতি আলাদা নজর রাখা একটি গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্ব। এছাড়াও কুকুরকে প্রতিনিয়ত বিভিন্ন ব্যায়ামের মাধ্যমে এমনভাবে রাখতে পারেন যেন তার ব্যাথা উপশম হয়।
এছাড়াও আপনি চাইলে আপনার পশুচিকিৎসক বা ভেটের সাথে আলোচনা সাপেক্ষে হাড়ের ব্যাথার জন্য প্রয়োজনীয় ব্যায়াম এবং দরকারী ওষুধগুলো জেনে নিতে পারেন যা তার অসুস্থতার সময় কাজে লাগবে।
রোদ উঠলে বাহিরে ঘুরতে নিয়ে যান
যখন বাইরে গরম আবহ থাকবে যেমন- সকালের রোদ উঠার পর এবং বিকালের আগে তখন আপনার পোষা কুকুরকে নিয়ে বাইরে হাঁটতে যাওয়ার চেষ্টা করুন। হাঁটার জন্য খুব ভোর এবং বিকালের সময় যখন ঠান্ডা পড়তে শুরু করে এ সময় গুলোতে তাকে বাইরে বের করা থেকে বিরত থাকুন। সূর্যের আলো থাকা অবস্থায় বাইরে খেলতে পারেন পোষা কুকুরের সাথে। সূর্যের আলোতে থাকা ভিটামিন আপনার এবং আপনার কুকুর উভয়ের জন্যই গুরুত্বপূর্ণ।
ময়েশ্চারাইজিং
বাসার ভেতরের ঠান্ডা আবহাওয়াতেও আপনার কুকুরের ত্বক ময়েশ্চারাইজার এর অভাবে শুষ্ক, খসখসে এবং রুক্ষ হয়ে যেতে পারে। যদিও এটা সত্যি যে প্রাকৃতিকভাবেই আপনার কুকুরের ত্বক নিজেকে বদলাচ্ছে।
তারপরও কিছু কিছু সময় তার ত্বকের অবস্থা বিচ্ছিন্ন দেখাতে পারে এবং পুরো শীতে জুড়েই এটি দেখা দিতে পারে। এ অবস্থা কোনো পদক্ষেপ না নিয়ে এভাবেই রেখে দিলে চামড়া ফেটে তা চুলকানোর ফলে নানাবিধ অসুখের সুত্রপাত হতে পারে। তাই তার জন্য উপযুক্ত ময়েশ্চারাইজার এর ব্যবস্থা করা আপনার কর্তব্য।
অতিরিক্ত খাবার দেয়া থেকে বিরত থাকুন
যদিও শীতকালে আপনার পোষা কুকুরের শরীরের জন্য চামড়ার পশমের আস্তরণ খুবই সাহায্য করে থাকে, কিন্তু চর্বির অতিরিক্ত আস্তরণ তাকে কোনোভাবেই সাহায্য করবে না৷ ঠান্ডা আবহাওয়ার কারনে এমনিতেই কুকুরের মধ্যে চলাফেরায় অলসতা দেখা দেয়।
তাই কুকুরের খাবার তালিকায় কিছু ক্যালরি কম হলে তার স্বাস্থ্যের জন্য উপকারী হতে পারে। এছাড়াও একটি উন্নত মানের মাংসজাতীয় ব্যালেন্সড ডায়েট আপনার কুকুরকে শক্তিশালী রাখতে সাহায্য করবে। এক্ষেত্রে বাসায় তৈরি খাবার কুকুরকে দিতে পারেন।
তাই শীতকালে পরিপূর্ণভাবে কুকুরের যত্ন নিন। কোন প্রকার হেলাফেলার কারণে সে মারাত্নক অসুখ বাধিয়ে ফেলতে পারে। যথাযথ যত্নের মাধ্যমে শীতকালে আপনার কুকুরের সুস্বাথ্য ও আরামদায়কতা নিশ্চিত করতে পারেন।
আশাকরি আপনি জেনেছেন যে, শীতকালে কিভাবে আপনার পোষা কুকুরের যত্ন winter dog care নিবেন … আপনার যদি কোন প্রশ্ন থাকে আমাদের কমেন্ট করে জানাতে পারেন।
আপনার কুকুরকে কি ভ্যাকসিন দিয়েছেন? যদি না দিয়ে থাকেন, তাহলে আমাদের আর্টিকেলটি পড়ে নিন।
3 thoughts on “শীতকালে কিভাবে আপনার পোষা কুকুরের যত্ন নিবেন? winter dog care”