বিড়ালের ডায়রিয়া বা বমি হলে কি খাওয়াবেন?

বিড়ালের ডায়রিয়া বা বমি খুবই কমন বা সাধারণ একটি ঘটনা। এই দুইটি জিনিষ একত্রেও ঘটতে পারে কিংবা একটি লক্ষণও দেখা দিতে পারে। তবে ক্ষেত্র বিশেষে এটি ছোট  বা বড় ধরনের রোগের লক্ষণ হিসেবেও দেখা দিতে পারে। বিড়ালের মালিক হিসেবে আপনি এই লিখাটির মাধ্যমে বিড়ালের ডায়রিয়া বা বমি কেন হয় এবং এই সময়ে কি খাওয়াবেন এবং হোম ট্রিটমেন্ট করাবেন তার বিস্তারিত জানতে পারবেন।

কি কারণে বিড়ালের ডায়রিয়া বা বমি হতে পারে? বিভিন্ন কারণ যেমন বেশী খাবার গ্রহন, হজম না হওয়া, হুট করে বিড়ালের খাদ্যাভ্যাসে পরিবর্তন আনা, অথবা বাসি পচা খাবার খেতে দেয়া ইত্যাদির জন্য বিড়ালের বমি বা ডায়রিয়া হতে পারে। এছাড়াও বিভিন্ন রোগ যেমন প্যারাসাইটস ইনফেকশন, ক্যান্সার, কিডনি লিভার ডিজিজ ইত্যাদি রোগের উপসর্গ হিসেবেও বিড়ালের বমি বা ডায়রিয়া দেখা দিতে পারে।

বিড়ালের ডায়রিয়া বা বমি মূলত কি?

মুখ দিয়ে পাকস্থলি থেকে খাবার বের করে দেয়াটাই মূলত বিড়ালের বমি। আর ডায়রিয়া হচ্ছে পাতলা পায়খানা অনবরত বের হওয়া। অনেক সময় অনেক নরম খাবার গ্রহনের কারণেও এসব ব্যাপার ঘটতে পারে।

কি কারণে বিড়ালের ডায়রিয়া বা বমি হতে পারে?

বিভিন্ন কারণ যেমন বেশী খাবার গ্রহন, হজম না হওয়া, হুট করে বিড়ালের খাদ্যাভ্যাসে পরিবর্তন আনা, অথবা বাসি পচা খাবার খেতে দেয়া ইত্যাদির জন্য বিড়ালের বমি বা ডায়রিয়া হতে পারে। এছাড়াও বিভিন্ন রোগ যেমন প্যারাসাইটস ইনফেকশন, ক্যান্সার, কিডনি লিভার ডিজিজ ইত্যাদি রোগের উপসর্গ হিসেবেও বিড়ালের বমি বা ডায়রিয়া দেখা দিতে পারে।

বমি অথবা ডায়রিয়ার কারণে বিড়ালের ডিহাইড্রেশন বা পানিশূন্যতা দেখা দিতে পারে। এছাড়াও এলক্ট্রলাইট ডিস্টার্বেন্স, ফ্লুইড লস ইত্যাদি নানা ধরনের জটিলতাও দেখতে পাওয়া যায় এই সময়টিতে। এই সময়টিতে বাসায় খুবই সাবধানে আপনি হোম ট্রিটমেন্ট শুরু করতে পারেন।

আপনার বাসায় বিড়ালের লোম পড়ে যেতে থাকলে কি করবেন? জানতে হলে আমাদের এই আর্টিকেলটি পড়ুন।

বিড়ালের বমি এবং ডায়রিয়ায় হোম ট্রিটমেন্ট

কারণ ভেদে ট্রিটমেন্ট বিভিন্ন ধরনের হতে পারে। তবে সাধারন ও প্রধান এপ্রোচটি হচ্ছেঃ

  • ভেট বা পশুচিকিৎসকের প্রেস্ক্রিপশন অনুযায়ী মেডিসিন খেতে দিন। তবে যেকোন প্রকার মেডিসিন দেয়ার পূর্বে ভেটের সাথে আলাপ করে নিন। কিছু মেডিসিন বিড়ালের জন্য খুবই বিপদজনক।
  • বিড়ালের ডায়রিয়া বা বমি ডীল করা বেশ কঠোর। ডায়রিয়া অনেক সময় দীর্ঘতর হতে পারে। কিছু সাধারন ট্রিটমেন্ট এর মাধ্যমে আপনি এর প্রাইমারী ট্রিটমেন্ট শুরু করাতে পারেন। বমি ২-৪ ঘন্টা এবং ডায়রিয়া এর থেকে কিছুটা বেশী সময় স্থায়ীত্ব হতে পারে। তবে প্রয়োজনে দ্রুত ভেটের সাথে যোগাযোগ করুন।
  • খাবার খেতে দেয়া থেকে দুই ঘন্টা বিরত থাকুন। অনেক সময় বিড়াল সামনে যা পায় তাই খেতে চাইতে পারে। এতে করে বমি করতে পারে বিড়ালটি। তাই পাকস্থলীকে কিছুটা সময় বিশ্রাম দিন যাতে করে এই সমস্যা না হয়।
  • দুই ঘন্টা পর বিড়ালকে অল্প কিছু পানি অর্থাৎ কয়েক চামুচ পানি খেতে দিতে পারেন। এরকম ২০ মিনিট পর পর কয়েক দফায় বিড়ালকে পানি খেতে দিন। এতে করে সে হাইড্রেটেড হবে। মাঝে মাঝে বিড়াল পানি নাও খেতে চাইতে পারে। বিড়ালকে বিভিন্ন পাত্রে ফ্রেশ পানি খেতে দিন। প্রয়োজনে কিছু আইস কিউ পানির পাত্রে দিতে পারেন। এতে করে বিড়াল পানি খেতে উৎসাহ পাবে। টুনা জুসও খেতে দিতে পারেন বিড়ালকে।
  • অল্প পানি দেয়ার পর বিড়ালের যদি বমি বা ডায়রিয়া না হয় তবে সাধারন খাবার খেতে দিতে পারেন।
  • সহজেই ডাইজেস্ট হয় এরুপ খাবার যেমন ডায়েট ফেলাইন, সেদ্ধ মুরগী ইত্যাদি খেতে দিতে পারেন। বেশী খেতে দিবেন না কখনোই। এতে করে তার আবার বমি হতেও পারে। মুরগী ছোট ছোট পিস পিস করে খেতে দিন। অল্প খেতে দিয়ে এক ঘন্টা পর আবার খেতে দিন। প্রথম দিন পর তিন চার ঘন্টা পর পর খাবার খেতে দিন। এরপর বিড়ালের অবস্থা বুঝে কম বেশী খেতে দিন।
  • দুইদিন এরকম খাবার খেতে দিন। একিই ডায়েট মেইনটেইন করুন।
  • আপনার বিড়াল বাইরে গেলে সমস্যা সমাধান না হওয়া পর্যন্ত বাইরে যেতে দিবেন না। বিড়ালের এক্টিভিটি এবং এপিটাইট খুব ভালোভাবে মনিটর করুন। বিড়ালের অন্যান্য সাইন সতর্কতার সাথে লক্ষ্য করুন।
  • কোন প্রকার সন্দেহ মনে এলে ভেট দ্বারা চেকিং করান।
  • মেডিকেশন সতর্কতার সাথে মেনে চলুন। ভেট যা বলে ঠিক তাই মেনে চলুন।
  • যদি বমি বা ডায়রিয়া অতিরিক্ত হওয়া শুরু করে তবে ভেটের কাছে দ্রুত নিয়ে চলুন। যদি লেথারজিক বা আলস্য অথবা অন্য কোন সিম্পটমস দেখতে পান তবে অবশ্যই দেরী না করে ভেটের কাছে নিয়ে চলুন। ভেট সিম্পটমস অনুযায়ী বিড়ালের ট্রিটমেন্ট শুরু করাবেন। এছাড়াও কিছু ডায়াগনসিসের প্রয়োজন হতে পারে। অসুস্থতার প্রকৃতি অনুযায়ী ট্রিটমেন্টের ভিন্নতা হতে পারে।

আপনার বাসার পোষা বিড়ালটি গরম পানি বা আগুনে পুড়ে গেলে কি করবেন? || আপনার বিড়ালের দাঁত ব্রাশ করাবেন কীভাবে

বমি এবং ডায়রিয়া কোন ক্ষেত্রে ইমার্জেন্সি হতে পারে?

বমি বা ডায়রিয়া খাবার গ্রহনের পর শুরু হলে বিড়াল আলস্যতা অনুভব করতে পারে। এরুপ ক্ষেত্রে মেডিকেল এসিস্টেন্টের দরকার হতে পারে। অবশ্যই ভেটের সাথে যোগাযোগ করুন। বিড়ালের ওজন কমে যেতে পারে এই সময়ে। যদি বমির সাথে রক্ত দেখতে পান তবে এটি মেডিকেল ইমার্জেন্সির সাইন। দ্রুত ভেটের কাছে নিয়ে যান। নীচের কোন সিচুয়েশনের সাথে আপনার বিড়ালকে রিলেট করতে পারলে সেসব ক্ষেত্রেও বিড়ালকে দেরী না করে ভেটের কাছে নিয়ে যাবেন।

  • আপনার বিড়াল যদি ইয়াং অথবা ওল্ড হয় এবং বিভিন্ন ধরনের হেলথ প্রব্লেম থেকে থাকলে ভেটের কাছে নিয়ে যাবেন।
  • ডিহাইড্রেশনে বিড়ালের অবস্থা সংকটাপন্ন অনুভব করলে ভেটের কাছে নিয়ে চলুন।
  • অন্যান্য কিছু সিম্পটমস যেমন ডিপ্রেশন, এনক্সাইটি ইত্যাদি অনুভব করলে ভেটের কাছে নিয়ে চলুন।
  • ডায়রিয়া প্রায়শই হয়ে থাকলে অবশ্যই ভেটের সাথে যোগাযোগ করবেন। 
  • ডায়রিয়ার সাথে যদি রক্ত যায় তবে ভেটের কাছে নিয়ে যান।

বিড়ালের ডায়রিয়া প্রতিরোধের কিছু ট্রিট্মেন্টঃ

আপয়ান্র বিড়াল যদি হোম ট্রিটমেন্ট প্রয়োজন হয় তবে বিভিন্ন ধরনের ট্রিটমেন্ট থেকে আপনার সুবিধা অনুযায়ী যেকোন একটিকে বেছে নিতে পারেন। নীচে কিছু ট্রিটমেন্টের উপায় সম্পর্কে বলে দেয়া হলঃ

১। বিড়ালের খাবারে পরিবর্তনঃ

ডায়রিয়ার সময় স্বাভাবিক খাবার বিড়ালকে খেতে দিন। নাইলে বিড়াল না খেয়ে দুর্বলতা অনুভব করতে পারে। এছাড়াও আপনি যদি মাত্রই বিড়ালের খাদ্যাভ্যাসে পরিবর্তন এনে থাকেন তবে আগের খাবারে ফিরে যান। এতে করে ডায়রিয়া ভালো হয়ে যেতে পারে। নতুন খাবারের উপাদান বিড়ালকে নাও স্যুট করতে পারে। নতুন খাবারের উপকরনে বিড়াআলের ক্রনিক রিয়েকশন ঘটতে পারে। এছাড়াও খাবার কোন উপকরন দ্বারা বিড়ালটির কোন প্রকার এলার্জিক রিয়েকশন হচ্ছে কিনা সেটি লক্ষ্য রাখুন।

২। ফাইবারঃ

বিড়ালকে স্বল্প ফাইবার সমৃদ্ধ খাবার খেতে দিন। এই সময়ে সেন্সিটিভ স্টমাক থাকায় হিসেব করে খেতে দিন। এটি বেশ সহজেই হজম হয়ে যায়। খাবার প্যাকেটে সেন্সিটিভ স্টমাক লিখা দেখতে পাবেন। ক্যানড পাম্পকিন, সাইলাম ইত্যাদি স্বল্প ফাইবার সমৃদ্ধ খাবার। শুরুতে এক দুই চামুচ করে খেতে দিতে পারেন।

৩। পানি ও ইলেক্ট্রোলাইট খেতে দিনঃ

ডায়রিয়ার সময়ে বিড়ালকে প্রচুর পরিমাণে পানি খেতে দিতে পারেন যাতে তারা ডিহাইড্রেট অনুভব না করে। বিড়ালের পানির পাত্র সবস্ময় পরিপূর্ণ রাখুন। চিকেন খেতে দিন। ক্যানড ফুডও খেতে দিতে পারেন এই সময়ে। ক্যানড ফুডে এক দুই চামুচ পানি মিক্সড করে খেতে দিতে পারেন।

৪। প্রো বায়োটিক্সঃ

স্বাভাবিক ডাইজেশনে বিড়ালের সুস্থ থাকাটা অনেকাংশেই নির্ভর করে। যদি এর বিচ্যুতি ঘটে তবে ডায়রিয়া গতে পারে এবং অনেক সময় ব্যাপী এর স্থায়ীত্ব হতে পারে। সেজন্য বিড়ালকে প্রো বায়োটিক সাপ্লিমেনড় দিতে পারে। তবে ভালো কোম্পানির প্রো বায়োটিক বিড়ালকে খেতে দিবেন।

৫। এন্টি ডায়রিয়াল মেডিকেশনঃ

ভেটের সুপাভিশনে বিড়ালকে এন্টি ডায়রিয়া মেডিকেশন দিবেন। কিছু মেডিকেশনের সাইড ইফেক্টসে বিড়ালের প্রচুর ক্ষতি হয়ে যেতে পারে। কাওলিন পেক্টিন মেডিকেশন বিড়ালের জন্য খুবই উপকারী ও নিরাপদ। ভেটের ইনস্ট্রাকশন অনুযায়ী বিড়ালকে দোজ দিন। কাওলিন পেক্টিনের উপকরন সম্পর্কে অবশ্যই খুব ভালো ধারণা নিয়ে নিন।

2 thoughts on “বিড়ালের ডায়রিয়া বা বমি হলে কি খাওয়াবেন?”

Leave a Comment