বিড়ালের ঠান্ডা লাগা ফ্লু রোগঃ cat flu

আপনার বিড়ালটি যদি স্বাস্থ্যবান হয়ে থাকে, তবে সাধারনত ফ্লু রোগে Cat Flu আপনার চিন্তার তেমন কোন কারন নেই। কিন্তু বিড়ালের যদি প্রায় সময়েই বিভিন্ন ধরনের রোগ হয়ে থাকে তখন এটি খুবই সিরিয়াস একটি ব্যাপার। অনেক সময় ফ্লু রোগে বিড়ালটির মৃত্যু পর্যন্ত হতে পারে।

তাই এই সময়ে দেরী না করে বিড়ালকে ভেট বা পশু চিকিৎসকের কাছে নিয়ে যান। মানুষের যেমন ভাইরাসঘটিত কারণে ঠান্ডা লেগে যায় ঠিক তেমনিভাবে বিড়ালেরও বিভিন্ন ভাইরাসের কারণে ঠাণ্ডা লাগতেই পারে।

বিড়ালের ঠান্ডা লাগা ফ্লু রোগঃ cat flu

বিড়াল এর ফ্লুর লক্ষণ বা ক্যাট ফ্লু সিম্পটমসঃ Cat Flu

ভাইরাস দ্বারা আক্রান্ত হওয়ার দুই সপ্তাহের মাঝেই Cat Flu বিড়ালের ফ্লু রোগের বিভিন্ন লক্ষণ (cat cold symptoms) দেখা দেয়া শুরু করে। সিম্পটমস গুলি হচ্ছেঃ

  • বিড়ালের চোখ দিয়ে পানি পরা
  • নাক দিয়ে অনবরত পানি পরা
  • গলা শুকিয়ে যাওয়া
  • মুখে আলসার হওয়া
  • হাচি দেয়া বা স্নিজিং
  • জ্বরাক্রান্ত হওয়া এবং গলা ভেঙ্গে যাওয়া 
  • বিড়ালের মুখ দিয়ে লালা বের হওয়া

যদি ফ্লু সংক্রান্ত কোন সিম্পটমস আপনার বিড়ালের মাঝে দেখতে পান তবে ভেটের সাথে দ্রুত যোগাযোগ করুন। আপনার বিড়াল উপরের কোন একটি সিম্পটমস দেখালে কখনোই হেলা ফেলা করবেন না। 

এছাড়াও বিড়ালের সাধারণ কিছু রোগ সম্পর্কে জানতে চাইলে আপনি আমাদের আর্টিকেল পড়তে পারেন, আশাকরি উপকৃত হবেন।

বিড়ালের ফ্লু হলে করণীয়/ বিড়ালের ঠান্ডা লাগলে করণীয়ঃ

বিড়ালের ঠান্ডা লাগলে বা বিড়ালের ফ্লু হলে করণীয় ট্রিটমেন্ট কি তা নিচে বর্ণনা করা হলো।

বিড়ালের ফ্লু রোগে কিভাবে ট্রিটমেন্ট করবেন?

লক্ষনের মাত্রা বুঝে আপনার ভেট এন্টোবায়োটিক প্রেসক্রাইভ করতে পারেন। তবে সবসময়েই যে এন্টোবায়োটিকের প্রয়োজন হয় ব্যাপারটি এরকম নয়। বাসাতেও আপনি পূর্ণাংগ গাইডলাইনস অনুসরণ করে বিড়ালের সঠিক যত্ন নিতে পারবেন। এক্ষেত্রে ভেট আপনাকে এসব গাইডলাইনস দিবেন। 

কোন ধরনের ভাইরাস বিড়ালকে আক্রান্ত করেছে সেটি নির্ণয় করার জন্য ডায়াগনোসিসের প্রয়োজন হতে পারে cat flu treatment। কিন্তু স্পেসিফিক ট্রিটমেন্ট না থাকায় এটি করার খুব একটা প্রয়োজন পড়ে না। 

যদি বিড়াল কোন কারণে একদমই খেতে পারে না, তবে বিড়ালকে হসপিটালাইজেশনের প্রয়োজন পড়তে পারে। 

গর্ভবতী বা প্রেগনেন্ট বিড়ালের যত্ন কীভাবে নিবেন? Pregnant Cat Care

বিড়ালের রোগ ও প্রতিকারঃ

বিড়ালের ফ্লু রোগ এবং এর প্রতিকার সম্পর্কে চলুন বিস্তারিত জেনে নেই।

বিড়ালের ভ্যাকসিনঃ Cat Flue Vaccine

রোগে আক্রান্ত হওয়ার পূর্বেই ভ্যাকসিন দ্বারা রোগটি নিয়ন্ত্রন করতে পারাটাই সবথেকে ভালো। এক্ষেত্রে দুই ডোজ ভ্যাকসিন প্রাথমিক ভাবে দিতে হয়। তবে সাথে রেগুলার বুস্টার অবশ্যই দিতে হবে।

ভ্যাকসিনেশনে অবশ্যই আপ টু ডেট মেইনটেইন করবেন। যদি কোন কারণে লম্বা সময়ের জন্য তাদেরকে ফোস্টার হোমে দিতে চান তবে অবশ্যই প্রয়োজনীয় ভ্যাকসিনেশন নিশ্চিত করুন। 

ভ্যাকসিন কি সবসময় ইফেক্টিভ?

কোন ভ্যাকসিনই সম্পুর্ণ প্রটেকশন দিতে পারে না কখনোই। তবে বিড়ালকে অবশ্যই নিয়মিত ভ্যাকসিন দিতে হবে। এটি বিড়ালকে যতটা সম্ভব রোগাক্রান্ত হওয়ার ঝুঁকি কমিয়ে দেয় এবং সবথেকে ভালো প্রিভেন্টিব একটি উপায়। 

তবে একটি ব্যাপার মাথায় রাখবেন আপনার ভ্যাকসিনেট বিড়াল অন্যান্য রোগ ব্যাধিএ আক্রান্ত না হলেও সে রোগের বাহক হিসেবে অন্য বিড়ালের রোগ ছড়িয়ে দিতে পারে। তাই বিড়ালকে ভ্যাকসিন দেয়ার পরেও সবসময় সতর্কতা হিসেবে নিরাপদ রাখার চেষ্টা করবেন। 

বাচ্চা বিড়াল সাধারনত মা বিড়াল থেকে ইমিউনি সিস্টেম লাভ করে থাকে। তবে বয়স বাড়ার সাথে সাথে বিড়ালের এই ইমিউনি সিস্টেম দুর্বল হওয়া শুরু করে। ইমিউনি খুব দুর্বল হয়ে গেলে বিড়ালের এই ফ্লু রোগ দেখা দেয়। মা বিড়ালের ফ্লু রোগ হয়ে থাকলে বাচ্চা বিড়ালেরও অসুস্থতা দেখা দেয়। তবে বাচ্চা বিড়ালের ফ্লু হলেও অনেক সময় সিম্পটমস নাও দেখা দিতে পারে। 

কোন বিড়ালের যদি ফ্লু হয়েই যায় তবে তখন ভ্যাকসিন দিলে সেটি কার্যকর নাও হতে পারে। 

বিড়ালের জন্য শীতে বাড়তি যত্ন নেয়া প্রয়োজন। আর তাই প্রতিনয়ত বিড়ালের শীতে যত্ন সম্পর্কে জানতে আমাদের আর্টিকেল পড়ুন।

এন্টি ইনফ্লেমেটরিজঃ

এন্টি ইনফ্লেমেটরিজের ক্ষেত্রে মেডিসিন প্রেসক্রাইব করা হয় যাতে লক্ষণগুলি প্রশমিত হয়। কিছু এন্টিভাইরাল এন্টি ইনফ্লেমেটরিজে কিছুটা সাহায্য করে থাকে। কিন্তু এই এন্টিভাইরালগুলি খুবই দামী এবং সবসময় কার্যকর হয় না। 

লুব্রিকেন্ট এবং আই ড্রপসঃ

কোন ভাইরাসটি বিড়ালের ফ্লু রোগের জন্য দায়ী এবং আপনার বিড়ালের স্বাস্থ্যের দিকটি বিবেচনা করে লুব্রিকেন্ট ও আই ড্রপসের পরামর্শ দেয়া হয়। ফ্লু রোগে আপনার বিড়ালের চোখের সমস্যা হতে পারে এমনকি বিড়ালের চোখ স্থায়ীভাবে ডেমেজ হয়ে  যেতে পারে। বিড়ালের চোখে আলসার দেখা দিতে পারে এবং সঠিক সময়ে সঠিক ট্রিটমেন্ট না করালে বিড়াল চোখ হারাতে পারে। 

চোখের প্রদাহে ভেটের পরামর্শ অনুযায়ী লুব্রিকেন্ট ব্যবহার করতে পারেন। যদি দেখতে পান আপনার বিড়ালের চোখে প্রদাহ হচ্ছে এবং অর্ধেক চোখ বন্ধ করে আছে তবে দ্রুতই ভেটের কাছে নিয়ে চলুন। 

গরমে বিড়ালের যত্ন সম্পর্কে জানতে হবে পড়ুন।

ফ্লু আক্রান্ত বিড়ালের যত্ন কিভাবে নিবেন?

বেশিরভাগ সময়েই ভেটরা আপনার ফ্লু আক্রান্ত বিড়ালের যত্ন বাড়িতেই cat flu home remedy নিতে বলবেন। চলুন এ বিষয়ে বিস্তারিত জেনে নেয়া যাক। 

স্ট্রেস কমানোঃ

স্ট্রেস বিড়াল তার রোগের মাত্রাকে আরো অনেকগুনেই বাড়িয়ে দেয়। তাই বিড়ালকে যতটা সম্ভব স্ট্রেস ফ্রী রাখুন। বিড়াল স্ট্রেস হলে তার কার্যকলাপ সতর্কভাবে লক্ষ্য করুন এবং সেগুলি নিয়ন্ত্রন করুন। 

নাক ও চোখ মুছে দিনঃ

ফ্লু আক্রান্ত বিড়ালের নাক ও চোখ মুছে দিন কিছুক্ষন পর পর। কেননা এতে করে 

  • আপনার বিড়াল খুবই আরাম অনুভব করবে
  • বিড়াল খাবারের স্মেল নিতে পারবে
  • কোন ঝামেলা ছাড়াই নিঃশ্বাস নিতে পারবে 

একটি নরম পাতলা কাপর উষ্ণ গরম পানিতে ভিজিয়ে ফ্লু আক্রান্ত বিড়ালের নাক ও মুখ মুছিয়ে দিবেন।

সঠিক পরিমাণে খাবার ও পানি খেতে দিনঃ

বিড়াল বেশ সহজেই এবং এবং তাড়াতাড়ি ডিহাইড্রেট বা পানিশূণ্য হয়ে পড়ে। যখন তাদের ফ্লু হয় তখন তারা খাবারের কোন প্রকার স্মেল বা টেস্ট বুঝতে পারে না। এতে করে তাদের খাবার গ্রহনের পরিমাণ অনেক কমে যায় এবং পানি গ্রহনের পরিমাণও বেশ কম হয় এই সময়টিতে। 

এই সময়ে বিড়ালকে বেশী খাওয়ানো ও পানি পানের জন্য সাধারন খাবারের মাঝে যেসব খাবার খাওয়া বেশ সহজ এবং কড়া স্মেল পাওয়া যায় এরুপ খাবার খেতে দিন। কিছু খাবারের সাজেশন হচ্ছে 

  • সার্ডিনস
  • পিল্কার্ডস
  • রোস্ট চিকেন
  • টুনা 

এছাড়াও তাদের হাইড্রেট রাখার জন্য বেশী বেশী পানি পানের উৎসাহ দিন। এতে করে যে মিউকাসের জন্য তারা স্মেল ও টেস্ট পাচ্ছে না সেটি দূর হবে। 

যদি কোনভাবেই বিড়াল খেতে না পারে তবে হস্পিটালে নিয়ে যেতে হবে ট্রিটমেন্ট করানোর জন্য।

সদ্য জন্ম নেয়া বিড়ালছানার সঠিক যত্ন নিন Newborn Kitten Care

নিঃশ্বাস গ্রহনে সাহায্যঃ

স্টিম বা বাতাস প্রবাহ বিড়ালকে নিঃশ্বাস নিতে কিছুটা সাহায্য করতে পারে। এছাড়াও বিড়াল স্ট্রেস হয়ে যায় এরুপ কিছু রুমে থাকলে সেটি রুম বা বাসা থেকে সরিয়ে ফেলুন। 

ক্যাট ফ্লু ট্রিটমেন্ট না করালে কি হবে?

হিউমেন ফ্লুর মতোই ক্যাট ফ্লুর ভাইরাস নাক ও নিঃশ্বাস তন্ত্রে সমস্যা সৃষ্টি করে। ব্যাক্টেরিয়াল ইনফেকশন আরো জটিলতা সৃষ্টি করে। যেমন নিউমেনিয়া। ভেটের সাথে প্রয়োজনে নিয়মিত যোগাযোগ করুন। 

যে কারণে ফ্লু রোগ হয়ঃ

ক্যাট ফ্লু যেসব কারণে হয়ঃ

  • ক্যালকিভাইরাস 
  • হার্পস
  • বোর্ডেটেলা ব্রনকাইসেপটিকা
  • ক্ল্যামিডোফিলা ফেলিস 

Calcivirus/ ক্যালকিভাইরাসঃ

এর কারণে বিড়ালের মুখে আলসার হয়। বিড়াল কিছু খেতে চায় না। তবে বিড়াল এটি থেকে এক দুই বছরের মাঝেই আরোগ্য লাভ করে। 

Herpes virus/ হার্পস ভাইরাসঃ

এর কারণে বিড়ালের চোখে আলসার হয়। এটি খুবই ভয়ানক। ভ্যাকসিনেশনের মাধ্যমে এটি প্রতিরোধ করা যায়। 

এটি কন্টাজিয়াস অর্থাৎ বিড়াল রোগের বাহক হিসেবে কাজ করে। এক বিড়াল থেকে অন্য বিড়ালে এটি ছড়ায়। 

এছাড়া বিড়াল যদি বাচ্চা জন্ম দেয়, তাহলে প্রসবের পর মা বিড়াল ও বাচ্চা বিড়ালের যত্ন সম্পর্কে আমাদের আর্টিকেলে তথ্য রয়েছে, আপনি দেখতে পারেন।

Bacteria/ বোর্ডেটেলা ব্রনকাইসেপটিকাঃ

বিভিন্ন ব্যাকটেরিয়ার কারণেও বিড়ালের ফ্লু রোগটি হতে পারে। বোর্ডেটেলা ব্রনকাইসেপটিকা নামক ব্যাক্টেরিয়ার কারণে কুকুরেরও ফ্লু রোগ হয় যা বিড়ালের মাঝেও সংক্রমিত হতে পারে। এটি লাঙ্গসে আক্রমন করে। এন্টোবায়োটিক দ্বারা এই রোগের ট্রিটমেন্ট করাতে পারেন। 

ক্ল্যামিডোফিলা ফেলিসঃ

এটির কারণে বিড়ালের চোখে প্রদাহসহ, ঠান্ডা বা চোখ লাল হতে পারে। এন্টোবায়োটিক দ্বারা এর ট্রিটমেন্ট করা হয়। এই রোগের ভ্যাকসিন পাওয়া যায় তবে সেটি সবসময় সুরক্ষা দেয় না। 

দীর্ঘমেয়াদী ফ্লুর সাইড ইফেক্টঃ

একবার ফ্লু দ্বারা আক্রান্ত হলে বিড়ালের স্যালাইভা, চোখ ও নাকের পানিতে ভাইরাস পার্টিকল বা ব্যাক্টেরিয়া থাকে। ফলে ফ্লু আক্রান্ত বিড়াল সহজেই অণ্য কোন সুস্থ বিড়ালের মাঝেও রোগ সংক্রমন করতে পারে। দীর্ঘমেয়াদী ইনফ্লেমেশন, মুখে ও চোখে প্রদাহ ও জিঞ্জিভিটিস দেখা দেয়।

এই রোগে অনেকদিন বিড়াল আক্রান্ত থাকলে অবস্থা বেশ জটিল হয় এবং এর প্রতিকার বেশ কঠিন হয়ে পড়ে। অন্যান্য রোগ ব্যাধিও সাইড ইফেক্ট হিসেবে দেখা দেয়া শুরু করে। তাই বিড়ালের ফ্লু হলে সেটি যেন বেশিদিন স্থায়ী না হয় সে ব্যাপারে খেয়াল রাখবেন এবং দ্রুত প্রতিকারের ব্যবস্থা করবেন যাতে বিড়াল দ্রুত সুস্থ হয়ে উঠে। 

Leave a Comment